কংগ্রেসের ডাকা ভারত বন্ধে শামিল হননি তিনি। শুধু তাই নয়, পেট্রোল–ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের পাশাপাশি আগের ইউপিএ সরকারকেও দায়ী করেছেন বহুজন সমাজ পার্টির শীর্ষ নেত্রী। লখনউয়ে মায়াবতী বলেছেন, ‘কংগ্রেস যে পথে হেঁটে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করেছে, ঠিক সেই পথেই হাঁটছে বিজেপি।’ ফলে রাজধানীর অলিন্দে একটা প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে। তাহলে কি বিজেপি–র পাতা ফাঁদে আটকে গেলেন মায়া? শুরু হল কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব তৈরির প্রয়াস?
সূত্রের খবর, মায়াবতীকে কাছে টানতে দলের প্রতিষ্ঠাতা কাঁসিরামকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে বিজেপি। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এ নিয়ে অমিত শাহের দূতের সঙ্গে মায়াবতীর একপ্রস্থ কথাও হয়েছে। সেই কথাবার্তায় মায়াবতীর বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলার তদন্ত রিপোর্ট দুর্বল করে দেওয়ার প্রস্তাবও নাকি দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে বিজেপি চায়, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এবং লোকসভা নির্বাচনে একা লড়ুক মায়ার দল। তাতে বিজেপি–র লাভ। উত্তর ভারতের তিন রাজ্যে মায়াবতী কংগ্রেসের শরিক না হলে বিজেপি–র আসন সংখ্যা বেশ কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে। আর লোকসভায় মায়াবতী একা লড়লে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি আবার অনেকটা আধিপত্য বজায় রাখতে পারবে। এমনকি লোকসভায় মায়াবতী–অখিলেশ জুটি বাঁধলেও যেন কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সংস্রব না–রাখে, এটাই দাবি বিজেপি–র। কারণ সেক্ষেত্রে ভোটের পর দরকার হলে বিজেপি–কে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন দিতেই পারবেন মায়াবতী।
মায়াবতীর বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলার তদন্ত শেষ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এবার আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা। তা ছাড়া তাজ করিডর মামলা, মায়ার ভাইয়ের বিরুদ্ধেও ইডি ও সিবিআইয়ের মামলা চলছে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, গত দু–তিন মাস ধরেই মায়াবতীর সঙ্গে একটা বোঝাপড়ায় আসার চেষ্টা করছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তারপরেই দেখা গেল ভারত বন্ধের আসরে মায়াবতীর অনুপস্থিতি। তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে বন্ধের বিরোধিতা করলেও দিল্লির সমাবেশে নিজেদের প্রতিনিধি সুখেন্দুশেখর রায়কে পাঠিয়েছিল। অখিলেশ যাদব বন্ধে সক্রিয় না–হলেও বিবৃতি দিয়ে বন্ধ সমর্থন করেছিলেন। দিল্লিতে কংগ্রেসের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে বিরোধী ঐক্যের ছবি দেখা গেলেও উত্তরপ্রদেশের দলিত নেত্রী মায়াবতী কিন্তু তাতে শামিল হননি। তারপর এদিনের ইউপিএ সরকারের সমালোচনা নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মায়াবতী এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। কংগ্রেস মধ্যপ্রদেশে মায়াবতীর সঙ্গে জোট করলেও রাজস্থানে জোট করতে চায় না। আর মায়াবতী বলে দিয়েছেন, জোট করতে হলে তিন রাজ্যেই করতে হবে। যথেষ্ট বেশি আসনের দাবিও জানিয়ে রেখেছেন তিনি। ওই তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে যে কোনও মুহূর্তে বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতে পারে। ওই রাজ্যগুলিতে গত তিনটি বিধানসভা ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, কংগ্রেস–বিএসপি জোট হলে রাজ্যগুলিতে বিজেপি–র ক্ষমতায় ফেরা কঠিন হবে। বিজেপি সেটাই আটকাতে চাইছে। কয়েক মাস আগে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, বিরোধীরা জিতলে মমতা ব্যানার্জি বা মায়াবতীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে আপত্তি নেই তাঁর। কিন্তু, ইদানীং রাহুলের নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে কংগ্রেস।
ভারত বন্ধে রামলীলার বিক্ষোভ সভায় কার্যত নেতৃত্ব দিলেন রাহুল। এটাও মায়াবতীর বন্ধের সমর্থনে প্রকাশ্যে না আসার বড় কারণ বলে অনেকে মনে করছেন।