তিনি শুধু বলিউডের প্রথম মহিলা সুপারস্টারই নন, তাঁর খ্যাতি বিশ্বজোড়া। ‘মিস হাওয়াহাওয়াই’- এর হাওয়া উঠেছিল এ বছর অস্কার মঞ্চেও। বলিউডের আকাশে এখনও তিনি ‘চাঁদনি’ হয়েই বিরাজমান। তিনি আর কেউ নন, সদ্য প্রয়াত বলিউড অভিনেত্রী শ্রীদেবী। যশ চোপড়ার ছবি ‘চাঁদনি’-তেই প্রথম শ্রীদেবীর অভিনয়ে মুগ্ধ হন ভারতের সিনেমাপ্রেমী দর্শক। ১৯৮৯ সালের এই ছবি সুপার-ডুপার হিট হয়। আর তার পর থেকে ‘চাঁদনি’ বলেই পরিচিত হয়ে আসছেন শ্রী। শ্রীদেবীকে এখনও ভুলতে পারেনি বলিউড। এমনকি সুইজারল্যান্ডও ভুলতে পারছে না শ্রীদেবীকে। কারণ সুপারহিট ফিল্ম ‘চাঁদনি’–র শ্যুটিং হয়েছিল সেখানেই। সেকারণেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে শ্রীদেবীর মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেদেশের সরকার।
তবে শ্রীদেবীই প্রথম নন, এর আগে বলিউডের বিখ্যাত পরিচালক যশ চোপড়ার মূর্তিও বসেছে সুইজারল্যান্ডে। ২০১৬ সালে সেই মূর্তির উদ্বোধন হয়েছিল। যশ চোপড়ার একাধিক ছবির শ্যুটিং সুইজারল্যান্ডে হয়েছে। তার মধ্যে শ্রীদেবীর চাঁদনিও একটি। সেই ছবি মুক্তির পরেই নাকি সুইৎজারল্যান্ডে ভারতীয় পর্যটকদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছিল। যদিও শুধু যশ চোপড়া নন, সেই রাজ কাপুরের আমল থেকেই বলিউডের ফেভারিট শ্যুটিং স্পট হয়ে উঠেছিল সুইৎজারল্যান্ড। প্রসঙ্গত, ১৯৬৪ সালে প্রথম রাজ কাপুর অভিনীত ‘সঙ্গম’-এর শ্যুটিং স্পট হিসেবে সুইজারল্যান্ডে ভারতীয় সিনেমা জগতের হাতেখড়ি। তারপর ১৯৬৭ সালে ‘অ্যান ইভনিং ইন প্যারিস’-এর শ্যুটিং। এই দুই সিনেমার লোকেশনের সাফল্যই পরবর্তীতে হিন্দি সিনেমাকে শ্যুটিংয়ের জন্য সুইজারল্যান্ডমুখী করেছে। তবে যশ চোপড়াই সুইজারল্যান্ডকে শ্যুটিং স্পট হিসেবে ভারতীয়দের মধ্যে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় করে তোলেন। যশ চোপড়ার বেশিরভাগ ছবিই সুইৎজারল্যান্ডে শ্যুট করা হয়েছে। সুপার হিট ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’ থেকে শুরু করে একাধিক ছবির শ্যুটিং হয়েছে এখানে। চোপড়া তাঁর বহু ছবির শ্যুটিং স্পট হিসেবে এ দেশের নানা শহরকে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর শেষ ছবি ‘জব তক হ্যায় জান’-এর শ্যুটিংও সুইজারল্যান্ডেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চোপড়ার আকস্মিক প্রয়াণে শ্যুটিং লোকেশন বদলানো হয়। চোপড়াকে সম্মান জানাতে ২০১১ সালে সুইস প্রশাসন তাঁকে ইন্টারলাকেনের সাম্মানিক অ্যাম্বাসাডর ঘোষণা করে। তাঁর নামে একটি ট্রেনেরও নামকরণ করা হয়। এছাড়া লুয়েনেনসির লেকের সামনে চোপড়ার বহু ছবির শ্যুটিং হয়েছে। সেজন্য ওই লেককে যশ চোপড়া লেক হিসেবেই সুইজারল্যান্ডবাসী চেনেন। তারপর ২০১৬ সালে ইন্টারলাকেনে চোপড়ার মূর্তিও বসানো হয়। এবার শ্রীদেবীকে শ্রদ্ধা জানাতে একই উদ্যোগ নিল সুইস সরকার।
তবে এর পিছনে ভারতীয় পর্যটকদের আরও বেশি করে সুইজারল্যান্ডমুখী করার পরিকল্পনাও রয়েছে। আর শ্রীদেবীকে দিয়ে পর্যটনের উন্নতি ঘটানোর প্রয়াস মন্দ নয়। কারণ ভারতীয়রা সুইজারল্যান্ডের মতো মনোরম দেশে ছুটি কাটাতে ভালোবাসেন। ভারতীয় সিনেমা জগতের রোম্যান্সের সঙ্গেও মিশে গিয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক শোভা। সেইদিক থেকে বলা যেতে পারে, বলিউডের আকাশে উজ্জ্বল ‘চাঁদনি’- র স্মৃতিকে উস্কে দিয়ে আবারও ভারতের মন জয় করার লক্ষ্যে এবার অনেকটাই সফল হতে চলেছে সুইজারল্যান্ড। কারণ ‘মিস হাওয়াহাওয়াই’- এর স্মৃতি এখনও ভারতবাসীর মন থেকে হাওয়া হয়ে যায়নি।