ভারতে একমাত্র কোলকাতার বিরিয়ানিতেই সম্ভবত সবচেয়ে কম মশলা ব্যবহৃত হয়। কোলকাতা বিরিয়ানি উদ্ভবের আছে আলাদা ইতিহাস। ১৮৫৬ সালে আওয়াধের শেষ নবাব ওয়াজেদ আলী শাহকে কোলকাতার মেটিয়াবুরুজে নির্বাসিত করা হয়। তিনি সেখানে সাথে করে তার প্রাসাদের বাবুর্চিকেও নিয়ে যান। বাবুর্চি সেখানে বিরিয়ানি রান্না করে এবং মেটিয়াবুরুজ সহ কোলকাতাবাসী সেই রান্না শিখে নেয়। কোলকাতার দরিদ্র পরিবারগুলো মাংস কিনতে অসমর্থ হওয়ায় তারা মাংসের বদলে আলু ব্যবহার করতে শুরু করে। লক্ষ্ণৌ বিরিয়ানিতে মাংসের সাথে আলু যুক্ত করে নিজেদের মতো মশলা ব্যবহার করে কোলকাতাবাসীরা যে বিরিয়ানির জন্ম দেয় সেই বিরিয়ানিই এখন কোলকাতাইয়া বিরিয়ানি নামে শহরতলীর দোকানগুলোতে বিক্রি হয়ে থাকে।
চলুন জেনে আসি কিভাবে বানাতে হয় কোলকাতার বিরিয়ানি –
রান্নার সময় : ৪ ঘন্টা
পরিবেশন : ৫-৬ জনের জন্য
প্রথম ধাপ : আলু ভাজা
৫ টা আলুর খোসা ছাড়িয়ে প্রত্যেক টুকরো ৮০ গ্রাম করে সেগুলোতে হলুদ খাবারের রং প্রলেপ দেবেন। ৩ সেমি গভীর পর্যন্ত ১৫০ গ্রাম ভেজিটেবল অয়েল প্যানে ঢেলে তাতে আলুর টুকরোগুলো সবগুলো দিক হালকা রং না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। হয়ে গেলে আলু থেকে তেলগুলো নিষ্কাশন করে তুলে রাখুন।
দ্বিতীয় ধাপ : বেরেস্তা বানানো
সেই একই ভেজিটেবল অয়েলে পেঁয়াজ টুকরো করে সেগুলো মুঠো করে একেবারে ছেড়ে দিন। বেরেস্তা হয়ে গেলে আলাদা ১৫ গ্রাম ও ২০ গ্রাম বেরেস্তা করে রেখে দিন।
তৃতীয় ধাপ : বিরিয়ানি মশলা বানানো
৬ টুকরো সবুজ এলাচ, ১ টুকরো কালো এলাচ, ৩/৪ চা চামচ লবঙ্গ, ৩ সেমি দারুচিনি দন্ড, অর্ধেক জায়ফল, ২ টি জৈত্রী, ২ গ্রাম শাহ জিরা, ২ গ্রাম কাবাব চিনি, ১/২ টেবিল চা চামচ মৌরি বীজ, ৩ গ্রাম সাদা গোলমরিচ বা শাহী মরিচ, ১/২ চা চামচ কালো গোলমরিচ এগুলো মধ্য আঁচে প্যানে ছেঁকে নিন ও পরপর নাড়াচাড়া করুন। ছ্যাঁকা উপাদানগুলো জোরে চূর্ণ করে নিন। মিশ্রিত উপদানগুলো ৮ গ্রাম ও ৫ গ্রাম আলাদা করে প্রস্তুত রাখুন।
চতুর্থ ধাপ : মাংস মেরিনেট করা
আদা ও রসুনের খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে সেগুলো মোটামুটিভাবে কেটে তারপর থেতলে পেস্ট বানিয়ে নিন। বড় কোন বাটিতে অথবা প্রেসার কুকারে ১০ গ্রাম করে আদা ও রসুনের পেস্ট, ১০০ গ্রাম দই, ২০ গ্রাম বেরেস্তা, ৫ গ্রাম ক্যাওরার জল, ৮ গ্রাম বিরিয়ানি মশলা, ১/২ টেবিল চা চামচ লাল গোলমরিচের গুঁড়ো, ২০ গ্রাম লবন ও ১/২ টেবিল চা চামচ গোলমরিচ একসাথে ১৫০ গ্রাম জলে মিলিয়ে সেই মিশ্রিত অংশ দিয়ে ১ কেজি মাংসে পুরোপুরি মেখে নিন। মাংসের ফাটলগুলোতেও মেখে নিতে হবে। তারপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে এক ঘন্টার জন্য রেখে দিতে হবে।
পঞ্চম ধাপ : চাল ভেজানো
৫০০ গ্রাম বাসমতী চাল ত্রিশ মিনিট ধরে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর জালির উপর চাল রেখে জল পড়তে দিতে হবে।
ষষ্ঠ ধাপ : মাংস রান্না করা
প্রেসার কুকারে আলুর টুকরোগুলো নিচের দিকে রেখে উপরে মেরিনেট করা মাংসগুলো রাখতে হবে। ১৫০ গ্রাম জল দিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য মধ্য-নিম্ন তাপে রান্না করতে হবে। ৩০ মিনিটের মধ্যে ১৫ মিনিটের পর প্রেসার কুকারের ভেতরের হাওয়া বের করে দিতে হবে। ত্রিশ মিনিট পর মাংস আর আলু আলাদা করে রাখতে হবে। প্রেসার কুকারে যে জল অবশিষ্ট থাকতে তার দুশো গ্রামের মতো রেখে দিতে হবে, এটাকে রসা বলে।
সপ্তম ধাপ : চালের জন্য সেদ্ধ জল
একটা জালি কাপড় নিয়ে তাতে ৬ টা সবুচ এলাচ, ২ টা কালো এলাচ, ৭ গ্রাম লবঙ্গ, ৬ সেমি দারুচিনি দন্ড, ৭ গ্রাম মৌরী বীজ, ৩ গ্রাম তেজপাতা নিয়ে বেঁধে থলের আকার বানাতে হবে। বড় পটে তিন কেজি জল বসিয়ে তাতে ৩০ গ্রাম লবন দিয়ে থলেটা জলে ছেড়ে দিয়ে ২০ মিনিটের জন্য সেদ্ধ করুন।
নবম ধাপ : রান্না ও পরিবেশন
১. বিরিয়ানির হাড়ি কম আঁচে দমের জন্য প্রস্তুত করুন। ঘী দিয়ে হাড়ির ভেতরটা পুরোটা লাগিয়ে নিন।
২. প্যানের নিচের দিকটা পুরোটা ৬-১০ টি তেজপাতা লাগিয়ে নিন।
৩. মাংসের টুকরোগুলো তেজপাতার অংশের উপরে সাজিয়ে নিন। আলুর টুকরোগুলো মাংসের উপরে দিন। আলু যেন হাঁড়ির ধারের দিকে না যায়।
৪. ৪০ গ্রাম আলুবোখারা, ১৫ গ্রাম বেরেস্তা ও ১ টেবিল চামচ গোলাপের পাপড়িগুলো পরিমিতভাবে ছড়িয়ে দিন।
৫. ৫ গ্রাম বিরিয়ানি মসলা ও ৫০ গ্রাম খোয়া ক্ষীরের (মাওয়া) অর্ধেক পরিমাণে পরিমিতভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
৬. এবার ২০০ গ্রাম রসা ও ৫ গ্রাম লেবুর রস দিয়ে দিতে হবে।
৭. সেদ্ধ হওয়া জলের রং পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার পর পট থেকে থলেটা বের করে ফেলে দিতে হবে। সেই জলে চাল দিয়ে ৮০% চাল সিদ্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
৮. প্রতিবার এক হাতা করে চালগুলো ছেঁকে নিন এবং সরাসরি প্যানে ছড়িয়ে নিন। অর্ধেক বিরিয়ানির ভাত প্যানে না যাওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।
৯. তারপর স্তরের উপরে বাকি বিরিয়ানি মসলা ও খোয়া ক্ষীর ছড়িয়ে দিন। এর সাথে ২০ গ্রাম গরম দুধে ভেজানো জাফরান ও রঙের মিশ্রণ চিমটি পরিমাণ জায়গায় জায়গায় অপরিমিত হারে ছড়িয়ে দিন।
১০. বাকিটুকু বিরিয়ানির ভাত প্যানে তুলে সমানভাবে দিয়ে নিন।
১১. বিরিয়ানির উপরের স্তরে ৪ ফোঁটা মিঠা আঁতর ও ক্যাঁওরা জল ও গোলাপজল মিশ্রিত ১৮০ গ্রাম দুধ দিন। সাথে গলা ২০ গ্রাম মাখন ও ৩০ গ্রাম ঘী যুক্ত করুন।
১২. প্যানের মুখ মোটা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল অথবা আটার স্তর দিয়ে ঢেকে নিন।
১৩. প্যান দমে মধ্য-নিম্ন আঁচে ত্রিশ মিনিটের জন্য গরম করুন। তারপর আরো ১৫ মিনিট ঠান্ডা করার জন্য রেখে দিন।