পঞ্চায়েত ভোটের আগেই বাম-বিজেপি আঁতাতের অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনকে ঘিরে সেই সম্পর্ক প্রকাশ্যে চলে এল। রামগড় এবং তমলুকের ২ পঞ্চায়েত দখল নিতে জোট গড়ল বিজেপি-নির্দল এবং সিপিএম। বিজয়মিছিলে একই সঙ্গে উড়ল গেরুয়া এবং লালঝান্ডা। দুই দলের স্লোগান দিলেন একই সমর্থকেরা। উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর–২ ব্লকের কানকি গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে মিলে গেল ফরওয়ার্ড ব্লক আর বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েননি তৃণমূলের নেতৃত্ব। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের আহ্বায়ক বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি বলেন, ‘ওরা মুখে একে-অন্যের বিরোধিতা করলেও কাজে ওরা চোরে–চোরে মাসতুতো ভাই’।
বামেরা বিজেপি–র হাত ধরতেই সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল। যদিও উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রামজ
স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘দল এটা সমর্থন করে না। যাঁরা বিজেপি–র সঙ্গে বোর্ড গঠন করেছেন, তাঁরা দলের সিদ্ধান্ত মানেননি। তাঁদের বহিষ্কার করা হল।’ সিপিএম নেতা অশোক সিং জানান, দলের সঙ্গে আলোচনা করেননি কোনও সদস্য। দলবিরোধী কাজ করলে অবশ্যই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।তবে সাধারণ সদস্যরা এসবের তোয়াক্কা করছেন না। ক্ষমতার লোভে তাঁরা জোট করেছেন একে-অপরের সঙ্গে।
পূর্ব মেদিনীপুরের ২২৩টি পঞ্চায়েতের ২২০টিতে এবার একক গরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল। রামনগর ১ ব্লকের তালগাছড়ি ১, রামনগর ২ ব্লকের পালধুই পঞ্চায়েত এবং তমলুকের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি এবং নির্দল কেউই গরিষ্ঠ ছিল না। শুক্রবার ত্রিশঙ্কু এই ৩ পঞ্চায়েত-সহ মেয়াদ উত্তীর্ণ মোট ১২১টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হল। ৩ টির মধ্যে নির্দলের সমর্থন পেয়ে পালধুই পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে এলেও বিরোধী জোটের কাছে তৃণমূলের হার হয়েছে তালগাছড়ি ১ এবং শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতে। তালগাছড়িতে তৃণমূলের দখলে ছিল ৬টি আসন, বিজেপি পেয়েছিল ৪টি, নির্দল ২টি আর সিপিএম ১টি। পঞ্চায়েত গড়তে প্রয়োজন ছিল ৭ প্রার্থী। এদিন বোর্ড গঠনে ৭ জন বিরোধী প্রার্থীই এক হয়ে যান। প্রধান নির্বাচিত হন নির্দল প্রার্থী তৃপ্তি বারিক। শ্রীরামপুরে ১৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ৫টি আসনে, বাম সমর্থিত নির্দলও জিতেছিল ৫টিতে। বাকি ৪টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। বিরোধী ৯ প্রার্থী এক হয়ে যাওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যান তাঁরা। প্রধান নির্বাচিত হন বিজেপি-র মঞ্জু বেরা।
কানকি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০টি আসনের মধ্যে প্রথমে তৃণমূল ৩, বিজেপি ৭, ফব ৪, সিপিএম ৩, কংগ্রেস ২ ও নির্দল ১টি আসনে জয়ী হয়। অভিযোগ, এরপর তৃণমূল নানাভাবে ফব থেকে ১, সিপিএমের ২, কংগ্রেসের ২ এবং ১ নির্দলকে দলে টেনে নেয়। ফলে বামেদের বোর্ড গঠন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। নির্বাচিত ফব সদস্যরা জানান, তৃণমূলকে আটকাতে স্থানীয় স্তরে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
বিজেপি-র জেলা নেতা প্রদীপ সরকার অবশ্য বলেন, ‘ওই পঞ্চায়েত প্রধানের পদ ওবিসি-র জন্য সংরক্ষিত। কোনও রাজনৈতিক সমঝোতা নয়, আমাদের নির্বাচিত কোনও সদস্য ওবিসি নেই বলেই প্রধান পদে ফব সদস্যকে মেনে নিতে হয়েছে’।