স্বাধীনতা দিবসের দিন অজিত ওয়াদেকরের মৃত্যুতে ভারতীয় ক্রিকেটে রেনেসাঁ রূপকারের জীবন অধ্যায় শেষ হয়েছিল।
স্বাধীনতা দিবসের পরের দিন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুতে ভারতীয় রাজনীতির এক বিরল যুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
কে জানতো কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভারতীয় টেনিসের চিরসবুজ তারকা লিয়েন্ডার পেজের বর্ণময় কেরিয়ারের কার্যত সমাপ্তি ঘটবে!
শনিবার শুরু এশিয়ান গেমস থেকে সরে দাঁড়ানোর পর লিয়েন্ডারের ভবিষ্যতে ভারতের নীল জার্সি গায়ে কোর্টে নামার ব্যাপার কার্যত ফুলস্টপ পরে গেল। এআইটিএ দেশের হয়ে ২৮ বছর খেলা লিয়েন্ডারকে জাতীয় দলে নেওয়ার আর এরপর চিন্তা করবে না। ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন জাকার্তা কাণ্ডের পর সেপ্টেম্বরে সার্বিয়ার বিরূদ্ধে ডেভিস কাপের জন্য ভারতীয় দলে লিয়েন্ডারের কথা সিলেকশন কমিটি ভাবলে আমি অবাক হব। তা ছাড়া রাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে লিয়েন্ডার ভারতীয় দলে আসে না। রোহান বপান্না, দ্বিবিজ স্বরণ সহ অনেক ভারতীয় ডাবলস প্লেয়ার রাঙ্কিংয়ে লিয়েন্ডারের চেয়ে এগিয়ে। শীর্ষ কর্তা আরো জানান যে সেইজন্য লিয়েন্ডারকে দেশের টপ স্কীমে রাখা হয়নি। যার মানে ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে লিয়েন্ডারকে ফেডারেশন ধরছে না।
১৮টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী ৪৫ বছর বয়সি লিয়েন্ডারকে ডাবলসে সুমিত নাগালের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলার নির্দেশ দিয়েছিল সর্বভারতীয় টেনিস সংস্থা । অন্য জুটিতে রোহন বোপান্না ও দ্বিবীজ শরণকে রাখা হয়। তিনি জানান, ‘‘এটা খুবই দুঃখের যে, বহু সপ্তাহ আগে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও একজন ডাবলস বিশেষজ্ঞকে আমরা এশিয়াডের দ্বিতীয় জুটিতে রাখতে পারলাম না।’’ বোপান্না ও শরণ নিজেরাই পরস্পরের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে কোচ জিশানের পক্ষে নাকি লিয়েন্ডার ও নাগাল বা রামকুমার রামনাথনকে দ্বিতীয় জুটিতে রাখা ছাড়া উপায় ছিল না। রামকুমার সাধারণত সিঙ্গলস খেলোয়াড়, যিনি অনিয়মিত ভাবে ডাবলস খেলে থাকেন। কিন্তু নাগাল খুব খারাপ ফর্মে রয়েছেন। যিনি পেশাদার সার্কিটে টানা ন’টি প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ হেরে এশিয়াডে খেলতে এসেছিলেন। এখানেই লিয়েন্ডারের প্রশ্ন, কেন দু’টি বিশেষজ্ঞ ডাবলস জুটি পাঠানো হল না এই প্রতিযোগিতায়?
তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিঙ্গলসে পদক জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে বলে রামনাথনকে ডাবলস খেলানো হচ্ছে না। কিন্তু শ্রীরাম বালাজি, বিষ্ণু বর্ধন, পূরব রাজা-রা তো এই মরসুমে অত্যন্ত ভাল খেলেছে। এঁদের মধ্যে যে কেউ এশিয়ান গেমসে আমাদের দলের শক্তি বাড়াতে পারত।’’ এঁরা কেউ সেরা একশোর মধ্যে রয়েছেন বা কেউ সম্প্রতি ছিলেন। কিন্তু তাঁদের দলে নেওয়া হল না। তাই লিয়েন্ডার মনে করছেন, তাঁর অনুপস্থিতি টেনিসে ভারতের পদকের সম্ভাবনার উপর প্রভাব ফেলবে না। এই বার্তায় লিয়েন্ডার আরও জানান, ‘‘কোচ জিশান আলির সঙ্গে রোহনের চোট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে আমার। শুনে ভাল লাগছে যে, ওর চোট সেরে গিয়েছে ও রোহন ফিরে আসায় ভারতের ডাবলস পদক নিশ্চিত। ও না থাকলে আমার পক্ষে সরে দাঁড়ানো সম্ভব হত না। কারণ, ওদের জুটি বোধহয় দেশকে সোনা এনে দেবে।’’
লিয়েন্ডার পেজের ধমনীতে বইছে মাধুকবির রক্ত। মাইকেল মধুসূদনের বংশজ লিয়েন্ডার অতিমানব হয়ে উঠতেন দেশের টি-শার্ট গায়ে দিলেই। দেশের পতাকা লিয়েন্ডারের শিরায় শিরায় সবসময়ই অতিরিক্ত মতন জাগাত। মাধুকবির বংশজ দেশের টি-শার্ট পরে কোর্টে না নামলে শেষ হয়ে যাবে ভারতীয় টেনিসের সবথেকে বর্ণময় অধ্যয়ের।