গত কয়েক বছরে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন প্রায় একমাস সময়সীমায় হয়েছে। লক্ষ্যণীয়ভাবে এবার এই অধিবেশনের সময়সীমা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। অধিবেশন মাত্র ১৮ দিনের। তার মধ্যেই ১০৮টি বকেয়া বিল, ৬টি অর্ডিন্যান্স পাশ করাতে হবে সরকার পক্ষকে। বিভিন্ন ইস্যুতে অধিবেশনে সরকারের থেকে জবাব চাইবে বিরোধীরা। ফলে এই স্বল্প মেয়াদে আদৌ কটা বিল পাশ করানো সম্ভব তা নিয়ে উদ্বেগে বিজেপি।
এই বিলগুলি যদি পাশ না করা যায় তাহলে লোকসভা ভোটের আগে বহু প্রতিশ্রুতিই স্রেফ ঘোষিতই থেকে যাবে। কারণ বিল পাশ না হলে কোনও সরকারি সিদ্ধান্তই বলবৎ হতে পারে না। যা চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছে মোদী, অমিত শাহদের।
বিগত অধিবেশন এবং আসন্ন বর্ষকালীন অধিবেশনের মধ্যে বিরোধী জোট আরও শক্তিশালী হয়েছে। তাই এবার অধিবেশনে সরকারপক্ষকে আরও বেশি করে চেপে ধরা হবে বলেই স্থির করেছে বিরোধীরা। বিরোধী বনাম সরকারপক্ষের শক্তি এবং সমীকরণের পরীক্ষা হবে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে। সেই নিয়ে দুপক্ষের রণকৌশল ইতিমধ্যেই তুঙ্গে। কিন্তু সংসদীয় কাজ এই বছরের শুরু থেকেই থমকে রয়েছে নীরব মোদি সহ অন্যন্য ইস্যুতে বিরোধীরা সরকারকে চেপে ধরায়। দুই কক্ষেই বিরোধীদের লাগাতার হইহট্টোগোলে গেরুয়া শিবিরের তাই এবার একদিকে যেমন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে মাথাব্যথা রয়েছে, তেমনই রয়েছে একরাশ বিল পাশ করানোর চিন্তা।
আসন্ন বর্ষাকালীন অধিবেশনও যদি নিষ্ফলা যায় তাহলে সরকারের হাতে আর মাত্র দুটি অধিবেশন। শীতকালীন অধিবেশন এবং আগামী বছরের বাজেট অধিবেশন। তারপরই লোকসভা ভোট। সুতরাং এই বর্ষাকালীন অধিবেশনেই বকেয়া বিলের সিংহভাগ পাশ করাতে মরিয়া সরকার। উপায় না দেখে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে শুরু করেছে সরকারপক্ষ। সংসদীয় বিষয়ক রাষ্ট্রমন্ত্রী বিজয় গোয়েল খোদ মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিরোধীদের সহায়তা চাইছে সরকার।
বকেয়া সংশোধনী বিলগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সারোগেসি রেগুলেশন বিল, তিন তালাক সংক্রান্ত বিল, শিশুদের ফ্রি ও আবশ্যক শিক্ষা প্রদান সংক্রান্ত বিল, ট্র্যান্সজেন্ডার প্রোটেকশন অফ রাইটস বিল,ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন বিল। ৬টি অর্ডিন্যান্সকে বিলে পরিণত করতে হবে। যে লোকপাল নিয়ে ইউপিএ সরকারকে চেপে ধরেছিল বিজেপি এবার সেই ইস্যুকে পালটা অস্ত্র করবে বিরোধীরা। এবার এনডিএ জোটকে চেপে ধরা হবে লোকায়ুক্ত বিল নিয়ে। পাশাপাশি এবারও বিরোধীদের তরুপের তাস নীরব মোদি বিজয় মালিয়া ললিতা মোদি ইস্যু।
সুতরাং এবারও যে সংসদের অধিবেশন যথেষ্ট উত্তপ্ত হতে চলেছে তা পরিস্কার। আর লোকসভার আগে তা নিয়েই চিন্তা বাড়ছে বিজেপির।