কে হবেন রাজ্যসভার নতুন ডেপুটি চেয়ারম্যান? বিজেপি-এনডিএ নাকি, বিরোধী জোটের প্রার্থী, কার জেতার সম্ভাবনা বেশি? এবং তা কীভাবে? তা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে হিসেব কষা। লোকসভা ভোটের আগে মোদিবিরোধী ‘মহাজোট’-এর এটিই হতে চলেছে প্রথম পরীক্ষা। চ্যালেঞ্জও বটে। আর এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দেওয়া হয়েছে বিরোধীদের এককাট্টা করার গুরুদায়িত্ব।
ঘটনাচক্রে তৃণমূলের কোনও প্রার্থীর এই পদের জন্য চোখ বুজে সমর্থন পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। যদিও রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পদের জন্য তৃণমূল লালায়িত নয় বলেই দলের বক্তব্য। তাদের লক্ষ্য, বিজেপি বা এনডিএ’র প্রার্থীকে হারিয়ে মোদি-অমিত শাহকে বার্তা দেওয়া। আপাতভাবে বিরোধী দলগুলি নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানে সামান্য সমঝোতা করলেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ’র হার নিশ্চিত। কিন্তু সেই সমঝোতা হবে কি? সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হলেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু। সভায় চেয়ারম্যানের পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডেপুটি চেয়ারম্যান। কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রীর সমপদমর্যাদা। তাই কেবল মোদি-অমিত শাহকে ধাক্কা দেওয়াই নয়, বকলমে সভা চালানোর অধিকার হাতে নেওয়ার সুযোগ কোনওমতেই হাতছাড়া করতে নারাজ বিরোধীরা।
১ জুলাই অবসর নিচ্ছেন ডেপুটি চেয়ারম্যান তথা কেরলের কংগ্রেস এমপি পি জে ক্যুরিয়ন। আগামী ১৬ অথবা ২৩ জুলাই থেকে বসতে পারে সংসদের বাদল অধিবেশন। সেরকমই কথা চলছে। তার আগেই রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন হবে। নির্বাচনের তারিখ ঠিক করবেন চেয়ারম্যান। সেটিই দস্তুর। তারিখ এখনও ঠিক না হলেও মোদি-অমিত শাহদের হারাতে প্রার্থী নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রের ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে মমতা দিল্লি এসে একদিকে আহমেদ প্যাটেল, অন্যদিকে চন্দ্রবাবু নাইডু, এইচ ডি কুমারস্বামীর সঙ্গে এ ব্যাপারে প্রাথমিক কথা বলেছেন বলে জানা গিয়েছে। বাকিদের সঙ্গে হয় টেলিফোনে, নয়তো দলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মাধ্যমে কথা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ওড়িশার শাসক দল বিজেডি এবং দক্ষিণে তেলেঙ্গানার শাসক দল টিআরএসকে বাগে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ দু’জনেরই প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান কংগ্রেস এবং বিজেপির থেকে সমদূরত্ব। বিজেডির ৯ এবং টিআরএসের ৬ জন এমপিই ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচনের ট্রামকার্ড। তারা যেদিকে যাবে, সেই পাল্লাই ভারী হবে। আর এই দুটি দলের সঙ্গেই তৃণমূলের সম্পর্ক ভালো। বাকি টিডিপির সঙ্গে কংগ্রেসের বনিবনা নেই। আপের সঙ্গে এক পংক্তিতে বসে না কংগ্রেস। মমতার সঙ্গে সদ্ভাব এদের দুজনেরই। সিপিএমের স্রেফ আপত্তি, টিএমসি প্রার্থী দিলে সমর্থন নয়।
রাজনৈতিক এই সমীকরণের কথা মাথায় রেখেই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মমতাকে বিরোধীদের এককাট্টা করতে বলা হয়েছে। ৫১ জন এমপি থাকলেও কংগ্রেস প্রয়োজনে প্রার্থী দেবে না বলেই ঠিক করেছে। তাদের লক্ষ্য বিজেপি-এনডিএকে আটকানো। আহমেদ প্যাটেলের মাধ্যমে মমতাকে তেমনই বার্তা পৌঁছেছেন রাহুল গান্ধী। সেই মতো বিজেডির সংসদীয় দলনেতা ভর্তৃহরি মেহতাবের সঙ্গে টিএমসির রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়ানের কথাবার্তা চলছে। টিআরএসের সঙ্গেও কথা হচ্ছে। টিআরএস ছ’জন এমপি নিয়েও কেশব রাওকে প্রার্থী করতে চাইছে। আবার বিজেডি তাদের এমপি প্রসন্ন আচারিয়াকে দাঁড় করাবে বলে ভাবছে। ওদিকে, বিজেপি তার শরিক পাঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দলের এমপি তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরালের পুত্র নরেশ গুজরালকে প্রার্থী করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
(সংগৃহিত)