কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে সারা দেশ জুড়ে সম্পর্ক ফর সমর্থন বা সম্পর্ক অভিযানে নেমেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। মূলত সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বদের বাড়ি গিয়ে বিজেপি নেতারা তুলে ধরছেন সরকারের চার বছরের সাফল্যের খতিয়ান। সেই অভিযানে বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। কিন্তু সৌমিত্রর মুখোমুখি হয়ে বেশ কিছু ‘অপ্রিয়’ প্রসঙ্গ তুলে নিয়ে আসায় রাহুল অস্বস্তিতেই পড়লেন।
বিগত চার বছরের কাজের খতিয়ান তুলে ধরার আড়ালে যে বিজেপি নেতৃত্ব আগামী ২০১৯-র লোকসভা ভোটের প্রচারের কাজটাও সেরে ফেলতে চাইছেন, তা স্পষ্ট। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাংলার বুদ্ধিজীবীদের কাছে বেশি করে পৌঁছতে হবে। রাহুলবাবু সেই উদ্দেশেই গিয়েছিলেন সৌমিত্রর বাড়িতে।
কী কথা হল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে? রাহুল সিংহ জানান, ‘‘সরকারের কাজ ওঁর ভাল লাগছে। নোট বাতিলে সমস্যা হয়েছে, সেটা জানালেন।’’ সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের কাজ আশা করেন তিনি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে তা-ও জানতে চেয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু সৌমিত্র পরামর্শ দিতেও অনীহা দেখান। নানা কাজ নিয়ে তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়, পারিবারিক সমস্যাও রয়েছে, তাই সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার মতো সময় তাঁর নেই— রাহুলকে অনেকটা এমন বার্তাই দেন সৌমিত্র।
জনসম্পর্ক অভিযানে বিজেপি নেতা তাঁর বাড়িতে যাওয়ায় রাজ্য জুড়ে যে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, সে প্রসঙ্গে বিরক্তি নিয়েই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমার বাড়িতে রোজ কয়েকশো লোক আসেন দেখা করতে। তেমন উনিও (রাহুল সিংহ) এসেছেন। এটাকে এত বড় করে দেখার কী আছে, বুঝতে পারছি না।’’ কিন্তু রাহুল সিংহ তো অন্য যে কোনও সাধারণ সাক্ষাৎপ্রার্থীর মতো নন। তিনি তো এ রাজ্যে বিজেপির প্রথম সারির নেতা। ‘‘তাতে কী হয়েছে! অনেকেই আসেন। উনিও দেখা করতে চেয়েছিলেন। সৌজন্যমূলক ভাবে পাঁচ মিনিট সময় দিয়েছি। এটা অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয়।’’ আরও বিরক্তি নিয়ে জানিয়ে দেন সৌমিত্র।
পাশাপাশি সৌমিত্রবাবু বর্তমান অসহিষ্ণু পরিস্থিতির উপরও বেশ কয়েকটি মন্তব্য করে বলে জানা গিয়েছে। তবে একাধিক বার নিজেকে বামপন্থায় বিশ্বাসী হিসাবে প্রকাশ করা সৌমিত্রবাবু যে নিজের স্বভাবসিদ্ধ ঢংয়ে রাহুলবাবুর সমানে বিজেপির সমালোচনা করবেন, তা টের পাননি দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। যে কারণে, সৌমিত্রবাবুর সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে আসার সময় তাঁকে যথেষ্ট বিমর্ষ ঠেকেছে।