পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হল প্রচন্ড, প্রচন্ড মিডিয়া সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়ে। মিথ্যা, অপ্রমাণিত খবরে বাজার গরম করেছিল অনেক তথাকথিত নিরপেক্ষ সংবাদ সংস্থা। কিন্তু লাভের লাভ কি কিছু হলো? মানুষ পুনরায় নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে ভোট দিলেন উন্নয়নের পক্ষে, বুঝিয়ে দিলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শেষ কথা, আর কেউ নেই মাঠে। কারণ আর কেউ সাধারণ মানুষের পাশে কি এতটা থাকতে পেরেছে, যতটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকেছেন?
কিছু অসাধু মানুষ, যারা কিনা বঙ্গ রাজনীতির আপাতবিরোধী, অনেক চেষ্টা করেছিলেন যেভাবে হোক তৃণমূল কংগ্রেসকে থামাতে হবেই! এই ‘ধনুকভাঙ্গা’ পণ পূরণের স্বার্থে নিজেদের আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ভেসে গিয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার স্রোতে। লাভ? হয়নি। তারা সম্ভবত এখনো বুঝতে অপারগ যে মানুষের মনে সেই একটাই নাম- একজন বামপন্থীর নামই বাজে, সেটা হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে কেন ভোট দেবে না বলুন তো? যে দলটা এটা সুনিশ্চিত করেছে যাতে প্রান্তিক মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পায়, যে দলটা সুনিশ্চিত করেছে যে কারোর যেন শিক্ষার অন্বেষণ স্তিমিত না হয়ে যায়, যে দলটা সুনিশ্চিত করেছে যাতে জন্মের পর যাতে প্রতিটি নবজাতক প্রথিবীর আলো দেখে, যে দলটা এটা সুনিশ্চিত করেছে যাতে … এ তালিকা নিঃশেষ করা দুঃসাধ্য। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস ভোট পাবেনা, এটা ভাবাও অলীক। কিন্তু যেভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছিল সিপিএম-বিজেপি-কংগ্রেস এবং সহোদর মিডিয়া, সত্যিই বাংলার রাজনীতিতে এরকম ঘটনা বিরল।
নদীয়া জেলায় বিজেপি-সিপিএমের জোট কোনো সংবাদ সংস্থা দেখায়নি। একটি বাংলা খবরের কাগজ সেটি প্রচার করে এবং তারপর অনেক গুলি ইংরেজি খবরের পোর্টাল সেটা প্রকাশ করে। এই দেখে সীতারাম ইয়েচুরি বলে দেন যে এগুলো মিথ্যে! তিনি কি এটা অস্বীকার করতে পারেন যে একসঙ্গে নদিয়ায় প্রচার করেনি সিপিএম-বিজেপি, একসঙ্গে দেওয়াল লিখন করেনি? পারেন না।
বিরোধীদের পক্ষ থেকে বলা হলো বাংলায় নাকি “গণতন্ত্র নেই”। তাও এই চরম অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতির মধ্যেও তারা ৯৬,০০০ নমিনেশন জমা দিতে পেরেছিল! মনে করুন তো ২০০৩ সালে বিরোধীদের নমিনেশনের সংখ্যা? ২০০৯এর? পারল কিকরে এরা? আর মিডিয়া? “অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে” বলে সমানে খবর চালাচালি চালিয়ে গেল! লজ্জা করেনা? কোথাও থেকে সত্যাসত্য যাচাই না করে, শুধুমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক দলের কথায় স্টোরি রান করে গেলেন? যারা অশান্তি করছিল, তাদের মুখে লেখা ছিল যে তারা তৃণমূল?
বিরোধীরা বলল, “ভোট হতে দিচ্ছে না”। মিডিয়া সেটাকে বাড়িয়ে চড়িয়ে বিরাট করে এমন করে দেখাতে শুরু করল যেন ৪৮,০০০ বুথেই এক চিত্র! মানা গেল ৫০০র মত বুথে কোনোরকম ঝামেলা হয়েছে, সেখানে পুননির্বাচন হল। তাহলে যে বাদবাকি ৯৮% শতাংশ বুথে শান্তিতে নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে তো ভালো ফল করা উচিৎ ছিল বিরোধীদের- যদি বাংলার মানুষের মনে তৃণমূলের জন্য এতই ঘৃণা হয়? করেনি কেন? কারণ বাংলার মানুষ সত্যে বিশ্বাস করেন, অসত্য প্রচারে না!
২৩ জনের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু হয়েছে এবারের নির্বাচনে, যার মধ্যে ১৬ জন তৃণমূল কর্মী! কিন্তু প্রচার? তৃণমূল নাকি “সন্ত্রাস” করছে। যদি তৃণমূল সন্ত্রাস করে তাহলে এত তৃণমূলের কর্মী মারা যাবে কেন? এখন যদি আমাদের জ্ঞানী বিরোধীরা বলেন যে “গোষ্ঠীদ্বন্দে মারা গেছে তারা”- তাদের কাছে একটাই উপদেশ, যদি দ্বিচারিতার কোনো কোর্স হয়, দয়া করে অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হন। অন্যরা মারা গেলেই তৃণমূল মেরেছে আর তৃণমূল মারা গেলেই গোষ্ঠীদ্বন্দ? বাঃ বাঃ! আর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? যার হৃদয় পৌঁছে যায় বিদেশে কারোর পা ভাঙলেও…যাঁর নিজের রাজ্যে ১৯০০ মানুষ মারা গেলেও কোনো ব্যাপারই মনে হয়না, তাঁর কি ব্যাপার? কর্ণাটকে টাকার খেলা শুরু করার আগেই সভাতে বলে দিলেন যে একজনও তৃণমূল কর্মী মরেননি! এই আপনার “সবকা সাথ সবকা বিকাশ”? মিথ্যা বলতে আর দ্বিধাবোধ করেননা বোধহয়। আপনার হৃদয় পৌঁছে যায়না বোধহয় সেই অসহায় তৃণমূল কর্মীদের পরিবারদের কাছে, যাঁরা রাগে ফুঁসছেন কবে বিজেপি-সিপিএমের হার্মাদরা শাস্তি পাবে? হয়তো সূর্য মিশ্রের মতোই তিনি মনে করেন, “তৃণমূল কে হারাতে যে কারোর হাত ধরবো”। কিছু খুব নামজাদা কাগজও তৃণমূল কর্মীদের প্রাণ প্রাণ বলে গ্রাহ্য করে না। যদি ১০০ জন তৃণমূল কর্মীও মারা যান, এক লাইনের খবর ছাড়া কিছুই প্রকাশিত হবেনা, এতটাই তাঁরা বিক্রি করে দিয়েছেন নিজেদের!
কিন্তু আশা ভরসা এই যে মানুষ এদের টাকার খেলা, মিথ্যাচারে সমর্থন করেননি,তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরই আস্থা কায়েম রেখেছেন।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )