তামিলনাড়ুর থুত্থুকুডিতে একটাও লাশ পড়ত না যদি তারা সংখ্যাগুরু পরিচয় গায়ে মেখে মসজিদ ভাঙতে যেত।
থুত্থুকুডিতে ১৩জন মারা যেত না যদি মিছিলের প্রত্যেকে ওই প্রখর দুপুরে মাথায় একটা করে ফেজ টুপি পড়ে এগিয়ে আসত পুলিশের জিপের সামনে।
গুলি চালানোর আগে রাষ্ট্রের পোষা বন্দুকবাজ দু’বার ভাবত যদি এদের একজনেরও গলায় ক্রস চিহ্ন থাকত। গায়ে থাকত সাদা পোষাক। মিছিলের আগে ভ্যাটিকান থেকে যদি আসত দৈবিক সমর্থন, মন্ত্রপূত ফুল।
থুত্থুকুডি অযোধ্যা নয়। থুত্থুকুডি মুজফফরনগর নয়। এখানে বিক্ষোভকারীরা পথে নেমেছিলেন বেদান্তর স্টারলাইট তামা কারখানার দূষণের বিরুদ্ধে। এলাকার জল বায়ুতে ব্যাপক দূষণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট একবার জরিমানা করেছিল স্টারলাইটকে। অসংখ্য মানুষের পেটের অসুখ, আর্সেনিক, শ্বাসরোগ এমনকি ক্যান্সারও হয়েছে এই দূষণে।
এক দশক ধরে বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল যে কারখানা ওখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। সেই দাবি বছরের পর বছর ধরে করেও কোনো ফল হয়নি। তাই গত একশো দিন ধরে ধর্নায় বসেছিলেন এলাকার মানুষ। সাধারণ মানুষ, ভুখা মানুষ, অসুস্থ মানুষ, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ।
থুত্থুকুডি আবারো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, মুসলমান, জৈন, খৃষ্ট না -এ দেশে সংখ্যালঘু হল ন্যায্য দাবীদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভরত ভুখা আম আদমি -যারা হকের জন্য পথে নামে। থুত্থুকুডি এটাও প্রমাণ করলো যে সংখ্যাগুরু এ দেশে হিন্দু না। সংখ্যাগুরু তারা যারা আরবপতি এ দেশে। যারা দেশের পাহাড়, নদী, খনিজসম্পদ কিনে নেয় জলের দরে। যারা আদিবাসী উচ্ছেদ করে অরণ্য কিনে নিতে জানে। যারা ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করিয়ে দিয়ে দুর্ঘটনার প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে।
এখনো ভাবছেন হিন্দু আর মুসলিমই দুটো ধর্ম যাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব? এ দেশের দুটো প্রধান ধর্ম, ধনী ও দরিদ্র। একে অপরের প্রতিপক্ষ ছিল, আছে, থাকবে।
‘হ্যাভ অল’ বনাম ‘হ্যাভ নট’ -এর লড়াই নিয়ে এখনো যদি দ্বিমত থাকে, এখনো যদি কনফিউজড থাকেন আপনি কোন পক্ষ তা নিয়ে, কিচ্ছুটি না করে ঘুমোতে যান। কাল অফিস আছে। তারপর দুর্গাপূজো বা ঈদের খুশী। মাঝে দাঙ্গা বাধবে কিছু হরিজন বস্তিতে বা হাজিপাড়ায়- আপনি শান্তিজল ছেটাবেন, তারপর মাংসপোড়া গন্ধ ভুলে আপনি আইপিলে মজে যাবেন, গরম গরম কেএফসি চিকেন, স্টাউট বিয়ার, ফিঙ্গার চিপস খাবেন।
বরং টিভি খুলুন এসি চালিয়ে। দেখবেন সংবাদ পাঠিকা বলছেন…..
“নমস্কার, এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় খবর। আজ গোটা দেশজুড়ে কিছু পোড়খাওয়া মারমুখী উড়ুক্কু জনগণকে ফ্যাৎ ফ্যাৎ সাঁই সাঁই করে উড়তে দেখা গিয়েছে। স্বৈরাচার আর অন্ধকার দূর করে বিপ্লবী হ্যাজাক হাতে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গিয়েছে ওদের।
শোষণ, পরাধীনতা, গ্লানি, জোচ্চোরি, মানুষে মানুষে তীব্র বিভেদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছে এঁরা।
শোনা যাচ্ছে এদের কাছে ‘ওয়েপন্স অফ মাস ডেস্ট্রাকশন’ আছে। পচাজলের বোম্বাচাক। বোঁদপড়া ডোবার জল যাতে পোকামাকড়, জীবাণু থিকথিক করছে- কাক-শকুনও যার ধারে বাড়ে যাবে না -তা পিচকিরি দিয়ে বেলুনে ঢুকিয়ে গিঁট দিয়ে বেঁধে জলবোমা বানিয়েছে। সাথে মেথরেরা এনেছে ঢ্যালা ঢ্যালা মানুষের বিষ্ঠা আপনার স্পা করা কর্পোরেট টাকে, সৌখিন জামায়, সব দেখেও না দেখার ভান করে চলা বিবেকে ছুঁড়বে বলে।”
( ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ )
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )