কাশ্মীর ইস্যুতে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরেও যখন সমালোচনার ঝড় বইছে, তখন নাগাল্যান্ড নিয়েও বিপাকে পড়তে হল মোদী সরকারকে। কারণ উত্তেজনায় এই মুহূর্তে কাশ্মীরের বাসিন্দাদের মতোই রাগে টগবগ করছেন নাগারা। প্রভাব পড়েছে মণিপুরেও। কেন্দ্রীয় সরকার অনড়, ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই নাগা জঙ্গী গোষ্ঠী এনএসসিএন (আইএম) গোষ্ঠীর সঙ্গে রফা চূড়ান্ত করে ফেলতে চায়।
কিন্তু এনএসসিএন (আইএম)-এর তরফে সাফ জানানো হয়, আলাদা পতাকা এবং নিজস্ব সংবিধান না হলে তারা রফা করবে না। নাগালিম বা বৃহত্তর নাগাল্যান্ডের দাবি নিয়ে নাকি আগেই রফা হয়ে গিয়েছে। আর সেটা নিয়ে উত্তেজনা মণিপুরেও। কারণ মণিপুরের নাগা বসতিপূর্ণ এলাকা বৃহত্তর নাগাল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। দুই রাজ্যেই তাই নিরাপত্তা বাহিনীতে ছয়লাপ। মণিপুরের জনতাও রাজ্যের অখণ্ডতা ধরে রাখতে জারি করেছে ‘হাই অ্যালার্ট’।
প্রসঙ্গত, উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় জঙ্গী গোষ্ঠী ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড (এনএসসিএন)–এর ইসাক-মুইভা গোষ্ঠীর সঙ্গে ২২ বছর ধরে চলছে ভারত সরকারের শান্তি আলোচনা। মায়ানমারের জঙ্গল থেকে এনএসসিএনের খাপলাং গোষ্ঠী অবশ্য ‘যুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে। ‘স্বাধীন নাগাল্যান্ড’-এর দাবি নিয়ে। অন্যদিকে, আইএম গোষ্ঠী অস্ত্রবিরতি বজায় রেখেই ‘নাগা স্বার্থ ও সম্মান’ অটুট না রেখে চুক্তি স্বাক্ষরে নারাজ। এই নিয়েই চলছে চাপানউতোর।
সূত্রের খবর, এনএসসিএন (আইএম) আলাদা সংবিধান আর নিজস্ব পতাকার দাবি ছাড়তে নারাজ। কাশ্মীর সংক্রান্ত ৩৭০ ধারা রদের পর কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সেটা মানা এখন আরও কঠিন। পাশাপাশি ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বৃহত্তর নাগাল্যান্ডের দাবি নিয়েও। আলোচনার শুরু থেকেই মণিপুরের একটা বড় অংশ নাগাল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি উঠছে। মণিপুরে এই নিয়ে প্রতিবাদ।
মণিপুরের অখণ্ডতা বজায় রাখতে কো-অর্ডিনেটিং কমিটি অন মণিপুর ইটিগ্রিটির অধীনে বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যেই আন্দোলনে নেমেছে। ৩১ অক্টোবর মণিপুরে প্রতিবাদ দিবসের ডাক দেওয়া হয়েছে। জনগণই জারি করেছে ‘হাই অ্যালার্ট’! অন্যদিকে, শান্তি চুক্তির আশায় নাগা স্টুডেন্ট ফেডারেশন পথে নেমেছে মোমবাতি মিছিল নিয়ে। মণিপুরেও তারা মোমবাতি মিছিল করছে বিভিন্ন জায়গায়।
নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে ব্যাস্ত নাগা ও মণিপুরি উভয় সম্প্রদায়ই। কুকিরাও জানিয়ে দিয়েছে, স্বার্থ মানা না হলে তারাও ‘উপযুক্ত’ রাস্তা নেবে। সবমিলিয়ে উত্তর–পুবে নতুন করে অশান্তির কালো মেঘ। এই অবস্থায় নাগাল্যান্ড ও মণিপুরকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে। পুলিশ কর্মীদের ছুটি বাতির করে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।
উল্লেখ্য, দুই রাজ্যেই বিজেপির জোট সরকার। কিন্তু নাগাল্যান্ডের আঞ্চলিক দলের মুখ্যমন্ত্রী নেফু রিও এবং মণিপুরের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং নিজেদের রাজ্যের স্বার্থকেই বড় করে দেখছেন। রিও জানিয়েছেন, নাগাদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখাই তাঁর বড় দায়িত্ব। আর বীরেন সিং সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মণিপুরের অখণ্ডতা নিয়ে কোনও আপোস হবে না।