পিতৃপক্ষের শেষ হয় পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ দিয়ে। আর মহালয়া দিয়েই শুরু দেবীপক্ষের। মহালয়ার ভোর মানেই উমার আলোর বেণু শুনে নস্ট্যালজিয়ার খাতা খুলে ফেলা। সারা বছর কেউ যতই দেরি করে ঘুম থেকে উঠুক, বাঙালি হলে মহালয়ার দিন ভোরে উঠে সে রেডিওয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পাঠ শুনবেই। তবে কি শুধু বাংলার বাঙালিদের ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য! নাহ, আদৌ তা নয়। নিউজিল্যান্ডের প্রবাসী বাঙালিদের কাছেও কিন্তু মহালয়া মানেই একটা চিরন্তন আবেগ।
তবে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ হওয়ায় নিউজিল্যান্ডে দুর্গাপুজো হয় বসন্ত কালে। জুলাই-আগস্টের বৃষ্টিভেজা শীতের পরে ঝলমলে রোদ দেখা যায় সেপ্টেম্বরে। রাস্তার দু’ধারে টোটো ফুলের ঝাড়গুলো মৃদু হাওয়ায় দোলে, ঠিক যেন কাশবন। পাইন, সিট্রাস, গোলাপ, গন্ধরাজ আর জুঁই ফুলের সুবাসে ভরে যায় চারপাশ। ক্যামিলিয়া গাছের পাতাগুলো স্থল-পদ্মের মতো গোলাপি ফুলে ঢেকে যায়। প্রকৃতির এই সম্ভারের আবহেই শুরু হয় আগমনীর আয়োজন। আর উৎসাহী বাঙালিদের তৎপরতায় এই সময়েই এফএমে সম্প্রচারিত হয় মহালয়া।
দুর্গাপুজোর জন্য আলাপ-আলোচনা আরম্ভ হয়ে যায় অগস্ট থেকেই। এখানে প্রায় সব দুর্গাপুজোই সপ্তাহান্তে হয়। আর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বোধন থেকে বিসর্জন সেরে ফেলতে হয়। তাই শুক্রবার বিকেলে অফিস ছুটি হলেই ‘স্টোরেজ’ থেকে প্রতিমা আনার ধুম লেগে যায়। তারপর শাঁখ, ঘণ্টা, উলুধ্বনি আর সিডি-তে বাজতে থাকে ঢাকের বাদ্যি জানান দেয়, পুজো আরম্ভ হয়ে গিয়েছে। অকল্যান্ড, হ্যামিল্টন, টুর্যাঙ্গা, ওয়েলিংটন, পামারস্টোন, দানেদিন ইত্যাদি মিলিয়ে অনেক পুজোই হয় সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারের এই মেঘের রাজ্যে।
বিদেশ-বিভুঁইয়ে বিদেশি বেশভূষায় আর বিদেশি চলনে-বলনে ঢেকে থাকা বাঙালিরা পুজোর দু’দিন প্রাণ ভরে বাঙালিয়ানা উপভোগ করে। তারপর রবিবারের সকালে দর্পণ বিসর্জন হয়। প্রতিমা বরণ আর সিঁদুর খেলার পরেই মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি অন্তর্হিত হয়ে যায় ‘স্টোরেজ কন্টেনারে’। নিউজিল্যান্ডে প্রতিমা নিরঞ্জনের উপায় নেই, তাই ‘প্যাক আপ’-এর সময়েই বিসর্জনের বিষাদ আচ্ছন্ন করে ফেলে সবাইকে। একইসঙ্গে শুরু হয়ে পরের বছরের ওই বিশেষ দু’দিনের অপেক্ষা।