বরাবর তাঁর লক্ষ্য ছিল গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দুর্গাপুরের ঐশী ঘোষ স্বভাবতই বললেন, ‘পুঁজিবাদী গেরুয়া শক্তি গ্রাস করছে দেশকে। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলবেই।’ জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদ দখল করে নিয়েছে সম্মিলিত বামজোট। গেরুয়া শক্তিকে পদানত করে জেএনইউয়ে বাম দুর্গ আরও শক্তিশালী হল।
স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র জিন্দাবাদ নয়। বাঙালি কন্যা স্লোগান ছুড়ছেন খাঁটি মালয়ালমে। তাঁকে ঘিরে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জুড়ে ‘লাল লহর’ উঠছে। বাংলার দুর্গাপুরের মেয়ে ঐশী ঘোষের বিশ্বাস, বাংলায় ফের বামেরা ঘুরে দাঁড়াবে। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘‘সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলা করতে পারে একমাত্র বামপন্থীরাই। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে হবে। মানুষের সমস্যা নিয়ে, মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। গেরুয়া শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে বামেরা ঘুরে দাঁড়াবেই!’’
ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় প্যানেলে সভাপতি পদে ঐশী পেয়েছেন ২,৩১৩ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এবিভিপি–র মণীশ জানগির পেয়েছেন ১,১২৮ ভোট। বিএপিএসএ প্রার্থী জিতেন্দ্র সুনারের প্রাপ্ত ভোট ১,১২২। এনএসইউআই–এর প্রশান্ত কুমার ৭৬১টি ভোট পান। সহ–সভাপতি পদে বামপ্রার্থী সাকেত মুন ৩,৩৬৫ ভোট পেয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এবিভিপি–র শ্রুতি অগ্নিহোত্রী পেয়েছেন সেখানে মাত্র ১,৩৩৫ টি ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে বামপ্রার্থী সতীশ যাদব পেয়েছেন ২,৫১৮টি ভোট। সেখানে এবিভিপির সবারেশ পি এ–র প্রাপ্ত ভোট ১,৩৫৫। যু্গ্ম সম্পাদক পদে বামপ্রার্থী মহম্মদ দানিশ পেয়েছেন ৩,২৯৫ ভোট। এবিভিপি–র সুমন্ত সাহুর প্রাপ্ত ভোট সেখানে ১,৫০৮। ঐশী বলেন,‘বামেদের জয় নিশ্চিতই ছিল। অফিশিয়ালি ফল ঘোষণা না হওয়ায় আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। এবিভিপি নির্বাচন বন্ধ করার সব চেষ্টা চালিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ওদের যোগ্য জবাব দিয়েছেন।’
ঐশীর কাঁধে ভর দিয়েই বামেরা প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরিদের আঁতুড় ঘর জেএনইউ-র ছাত্র সংসদ নিজেদের দখলে রাখা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলল। দ্বিতীয় মোদী সরকারের ১০০ দিনের মাথায় একে ‘সরকারের মুখে চপেটাঘাত’ হিসেবেই দেখছেন এসএফআই-এর সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস। আর এর জেরে আরো ব্যাকফুটে গেরুয়া শিবির।
জেএনইউ-এ ফের লাল ঝান্ডা ওড়ালেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঐশীকে নিশানা করা শুরু হয়েছে। তাঁর একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ঐশীর ডান হাতে পাথর-সহ তাগা বাঁধা। আঙুলে লোহার আংটিও রয়েছে। ‘ট্রোল’ বাহিনীর প্রশ্ন, ইসরো-র চেয়ারম্যান চন্দ্রযান-২ রওনা হওয়ার আগে তিরুপতির মন্দিরে পুজো দিতে গেলে কমিউনিস্টরা তাঁকে আক্রমণ করেন। আর নিজেরা তাগা-তাবিজ পরেন! এসএফআই-এর নেতা ময়ূখের জবাব, ‘‘ওটা বহু পুরনো ছবি। বামপন্থী রাজনীতিতে এসে সচেতন হয়েছেন তিনি। এ সব বাদ পড়েছে।’’ প্রাক্তন ছাত্রনেতা কানাইয়া কুমার টুইট করেছেন, ‘গোলওয়ালকর, গডসে, হেডগেওয়ার, সাভারকরকে হারিয়ে ভগৎ সিংহ, আশফাক, গাঁধী ও অম্বেডকরের জয়। প্রগতিশীল বিচারধারার জয়!’
এই জয়ের পর এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, ‘জেএনইউয়ে এবিভিপি–র গুন্ডাগিরির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে পড়ুয়ারা। এটা সঙ্ঘের সম্মিলিত চক্রের বিরুদ্ধে জেএনইউয়ের পড়ুয়াদের জয়। ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র ধ্বংসের যোগ্য জবাব দিয়েছে জেএনইউ। প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র সংসদ দখলের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছেন পড়ুয়ারা। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা যে বামেদের পাশে রয়েছেন, এই বিপুল জয়ই তার প্রমাণ।’
দিল্লি মানে রাজধানী, যেখান থেকে দেশ চলে। যেখান থেকে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা ঠিক করেন কোন পথে চলবে কালকের ভারত। সেই গেরুয়া শিবিরের খাস তালুকে কী ভাবে পারল বাম ছাত্র জোট? ঐশী বললেন, “আমরা ছাত্রদের দাবি নিয়ে ছাত্রদের কাছে গিয়েছি। একই সঙ্গে বলার চেষ্টা করেছি, কী ভাবে ইতিহাস বদলানোর ব্লুপ্রিন্ট আঁকা হচ্ছে। কী ভাবে দেশপ্রেমের জিগির তুলে আসল সমস্যাগুলিকে অন্ধকারে পাঠানোর চেষ্টা করছে সরকার। ভোটের ফলে স্পষ্ট, রাজধানীর উৎকর্ষ কোন দিকে।”বিজয় মিছিলে ভেসে আসছে “এল পুয়েব্রো ইউনিডো, জামাস এরা ভেনসিডো, ডি পিপল ইউনাইটেড, শ্যাল অলওয়েস বি ভিক্টোরিয়াস।” সব শেষে ঐশী বললেন, “ঐক্যবদ্ধ মানুষের জয় সুনিশ্চিত।” বলেই মিলিয়ে গেলেন মিছিলে। স্লোগানে….