লোকসভা ভোট ঘোষণার পর থেকেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল বিজেপির গুন্ডাবাহিনীর দাপাদাপি। আর ২৩ মে ভোটের ফল প্রকাশের পর তা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রায় রোজই চলছে তৃণমূল কর্মীদের বেধড়ক মারধর, ঘর ভাঙচুর, ঘরছাড়া করার হুমকি। চলছে জোর জবরদস্তি তৃণমূলের পার্টি অফিস দখলও। এবার যেমন তৃণমূল করার ‘অপরাধে’ মারধর করা হল এক গৃহবধূকে। আর সেই মারধরের মাঝে পরে প্রাণ গেল দুই মাসের শিশুর। এই ঘটনায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থানা এলাকার এই ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, অশোকনগর থানার শ্রীকৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের কেওশা কলোনি এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ শিখা গাঙ্গুলীর স্বামী রবি গাঙ্গুলী কাজের সূত্রে ভিনরাজ্যে থাকেন। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী শুধুমাত্র তৃণমূল করেন। পরিবারের বাকিরা বিজেপি সমর্থক। শিখার অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য তাঁকে জোর করা হয়। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় তাঁর ওপর ক্ষোভ তৈরি হয়। এরপর থেকেই তাঁর স্বামী যখনই বাড়ির বাইরে থাকেন, তখনই তাঁর ওপর নানা অছিলায় অত্যাচার শুরু হয়।
অভিযোগ, শনিবার নিজের ২ মাসের শিশু সন্তানকে শিখা যখন খাওয়াচ্ছিলেন, সেই সময় তাঁর দুই ননদ এবং অন্য আত্মীয়দের মদতে বড় ভাসুর, বিজেপি নেতা সুশান্ত গাঙ্গুলী তাঁর ওপর চড়াও হন। তাঁকে মারধর শুরু করেন। সেসময় আঘাত লাগে শিশুটিরও। এতেই শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে হাবড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই শিশুটির মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় অশোকনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শিখাদেবী। তাঁর অভিযোগ, ‘আমার ভাসুর এবং শ্বশুরবাড়ির অন্যরা এর আগেও আমার ওপরে শারীরিক অত্যাচার করেছে, শুধুমাত্র বিজেপি না করার অপরাধে। শেষ পর্যন্ত আমার কোলের শিশুটিকেও মেরে ফেলা হল। তাঁদের প্রত্যেকের কঠিন সাজার দাবি করছি।’
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান রফিকুল হাসান অভিযোগ করেন, ‘ভোটে জেতার পর থেকে বিজেপি নানাভাবে মানুষের ওপরে অত্যাচার শুরু করেছে। তারই এক মর্মান্তিক পরিণতি ঘটল শিখা গাঙ্গুলী নামে ওই গৃহবধূর বাড়িতে।’ বিজেপি যদিও এই ঘটনার কথা অস্বীকার করে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে শিখাদেবীর এ হেন অভিযোগ যে তাদের বেজায় অস্বস্তিতে ফেলেছে, তা বলাই বাহুল্য।