ফ্রান্সের রাজপথে দৈত্যাকার পুতুল নিয়ে থিয়েটার ‘রয়্যাল দ্য লুকস’, স্পেনের ‘লা টোমাটিনো’, ব্রাজিলের ‘রিও কার্নিভাল’-এর সঙ্গে এখন এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হচ্ছে বাংলার ‘পুজো কার্নিভাল’। ২০১৬ সালে ২৫ টি দুর্গা প্রতিমা নিয়ে যাত্রা শুরু করে, মাত্র ৩ বছরের মধ্যে পৃথিবীর সেরা ১০ কার্নিভালের মধ্যে জায়গা করে নিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলার এই পুজো কার্নিভাল। সৌজন্যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সারা বিশ্বের নিরিখে ঠিক কোন জায়গায় বাংলার পুজো কার্নিভাল? তুমুল জনপ্রিয়তা দেখে অনুষ্ঠানটি লাইভ দেখাতে ছুটে এসেছে ন্যাশানাল জিওগ্রাফি চ্যানেল। বিশালতার নিরিখে ইতিমধ্যেই উইকিপিডিয়ায় স্থান পেয়েছে বাংলার পুজো কার্নিভাল। প্রায় ৩০ টি দেশের ১ হাজারের বেশী সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার, টেকনিশিয়ান হাজির হয়েছেন কলকাতায়। বোঝা যাচ্ছে!
বাম আমলে বাবুঘাটে মুষ্টিমেয় বিদেশি অতিথিদের পরিসর ছাড়িয়ে আক্ষরিক অর্থেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার দুর্গোৎসবকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বের আঙিনায়। যার জন্য অসংখ্য দেশের পর্যটন দপ্তর নিজেদের উদ্যোগে পুজো কার্নিভালের প্রচার শুরু করেছেন। তাঁদের কথায়, গত দুই বছরে তাঁদের দেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন রেড রোডের পুজো কার্নিভাল। এবছরও কার্নিভাল দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন বহু মানুষ। তাই আজ ২৩ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটেয় ঐতিহাসিক এই কার্নিভাল প্রত্যক্ষ করতে প্রহর গুনছে, শুধু বাংলা নয় সারা বিশ্ব।
৭৫ টি প্রতিমা অংশগ্রহণ করছে কার্নিভালে। কলকাতা তাই সেজেগুজে রেডি। রেড রোডে রাজবাড়ির নাটমন্দিরের আদলে বানানো হয়েছে দুটি মঞ্চ। একটিতে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ভিভিআইপি-রা। ঠিক উল্টোদিকের মঞ্চ বিদেশি অতিথিদের জন্য। তার পাশ থেকে দর্শকদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহর জুড়ে লাগানো হয়েছে বিশালাকার এলইডি স্ক্রিন। ন্যাশানাল জিওগ্রাফি চ্যানেলের পাশাপাশি রাজ্যের তরফেও গোটা অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হবে। বিশাল সংখ্যক বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে কলকাতায়। এখনও আসছেন তাঁরা। বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলার পর্যটন শিল্পের বিশালতা। গত বছরের কার্নিভাল ঘিরে কলকাতায় দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ৩৩ শতাংশ বেড়েছিল। এবছর আরও বেশি ভিড় হবে বলে মনে করছে পর্যটন ও হোটেল সংস্থাগুলি।
রেড রোডে একাধিক পুজো মণ্ডপ তুলে ধরবে বাংলার সংস্কৃতি এবং সর্ব ধর্ম সমন্ময়ের ইতিহাস। পাশাপাশি রাজ্যের ছোট-বড় পুজো উদ্যোক্তাদের পাশে যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়িয়েছেন, তাঁকে সম্মান জানিয়ে তাঁরা বিশ্বের সামনে তুলে ধরবেন বাংলার বর্তমান উন্নয়নের ছবি। হাজির থাকবে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী-সহ একাধিক প্রকল্পের সুসজ্জিত ট্যাবলো। রেড রোড কাঁপাতে থাকছেন মহিলা ঢাকিরাও। ইতিমধ্যেই টেমস ফেস্টিভ্যাল চুক্তি করেছে রাজ্যের সঙ্গে। তাঁদের কর্মকর্তারাও হাজির থাকছেন কার্নিভালে। পাশাপাশি ১৩ টি দেশের রাষ্ট্রদূতেরা সশরীরে উপস্থিত থেকে কার্নিভাল প্রত্যক্ষ করবেন।
পুজোর পরের পুজোর প্রস্তুতি শেষ। শেষ মুহূর্তের তুলির টান শরীরে নিয়ে সে প্রস্তুত। এবার শুধু ঘণ্টা পড়ার অপেক্ষা।