খাদির চাহিদা এখন আকাশছোঁয়া। বলা ভাল শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, রোজের পোশাকে খাদিই ভরসা। অফিস বা ছোটখাটো ঘরোয়া গেট টুগেদারের পোশাক হিসেবে খাদির কদর বাড়ছে। আরামদায়ক পোশাক হিসেবে খাদির পোশাকের উপরে অনেকে ভরসাও করছেন। তাই চাহিদা মেনে খাদির পোশাকের ডিজাইনে আনা হয়েছে নানা বদল। এখন সেগুলো বেশ ফ্যাশবলও বটে।
আবার ক্লাসি ফ্যাশন সচেতনতায় যারা বিশ্বাসী তাঁদেরও পছন্দ খাদি।কারণ খাদির কাপড়ে একটা সমৃদ্ধ টেক্সচার রয়েছে। যিনি পরছেন তাঁর একটা আলাদা ব্যক্তিত্ব তৈরি করে দেয়- খাদির পোশাকের এমনই মাহাত্ম্য।তাই খাদির সুতি বা সিল্কের শাড়ি, কুর্তি অন্যান্য পোশাক বেশ পছন্দসই।
তবে কেবলই রোজের পোশাক নয়। বহু খাদি প্রতিষ্ঠানই এখন অন্যান্যদের সঙ্গে পাল্লা দিতে হালফিলের ফ্যাশন ট্রেন্ড ধরে ফেলেছে। সেই মোতাবেক মহিলাদের জন্য পালাজো, ধোতি প্যান্ট, সরু ফিতের কুর্তি, পুরুষদের জন্য সাবেক পাঞ্জাবির পাশাপাশি স্লিম ফিট কুর্তি, শর্ট কুর্তি, ভি নেক ফতুয়া এমনকি সুতির হালকা কাপড়ের প্যান্টও তৈরি করে বানাতে শুরু করেছে।
ফলে খাদি মানেই যে স্বদেশি আন্দোলন, স্কুল শিক্ষকের ডোরা কাটা শার্ট, কমিউনিস্টদের পাঞ্জাবি অথবা কংগ্রেসি নেতাদের মোটা সাদা কাপড়ের পাঞ্জাবির ছবি চোখের সামনে ফুটে ওঠে, এখন আর তা মোটেই না। খাদির পোশাককে জনপ্রিয় করতে এই বদলটা জরুরি ছিল। খাদি পোশাক প্রস্তুতকারকেরা ফ্যাশনের চাহিদা মেনেই নিজেদের বদলে ফেলেছেন। সব রকমের ক্রেতাদের কথা ভেবেই সাবেকি খাদি কটনের পাশাপাশি লিনেনের তৈরি ফর্মাল শার্ট, প্যান্ট, মহিলাদের জন্য চুড়িদার, কুর্তির রকমারি সম্ভার রাখা হচ্ছে খাদির দোকানগুলিতেও।
এবার পুজোয় খাদির বাজার কেমন? চলতি পোশাকের ট্রেন্ড কী? উত্তর দিতে গিয়ে কলেজ স্ট্রিটের খাদি গ্রামোদ্যোগ ভবনের কর্তা শুভরঞ্জন বিশ্বাস প্রথমেই এক সঙ্গে অনেকগুলি নাম বলে গেলেন। তিনি জানান, এবার পুজোয় শাড়ির মধ্যে বাংলার গাছি তসরের উপরের জড়ি বর্ডার, বিষ্ণুপুর কাতানের বাই কালারে ফিগার মোটিভ, ওরলি মোটিভ, প্রিন্ট তসর, তরসের উপরে কাঁথা স্ট্রিচ, মধ্যপ্রদেশের কোসা, রায়পুরের হ্যান্ডলুমের কটন, সম্বলপুরি কটকি, খাদি কটনের উপরে জামদানি, মাধবীলতা, গঙ্গা-যমুনা কাজ, ফিউশন শাড়ির মধ্যে মধ্যমণির মতো শাড়ি এবার বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এবার পিওর সিল্ক, ঘিচার চাহিদা গত বছরের থেকে একটু কম। তবে সবমিলিয়ে চাহিদা মোটামুটি ভালর দিকেই।
তিনি আরও বলেন যে, পালাজো, ইন্দো-ওয়েস্টার্ন স্টাইলের, ভি নেক লং কুর্তি, সিল্ক প্রিন্টেড কুর্তিও দারুণ বিকোচ্ছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে সাবেক খাদির পাঞ্জাবির পাশাপাশি স্লিমফিট কুর্তা, খাদি কটনের ফর্মাল, ক্যাজুয়াল শার্ট, লিনেন শার্টের, সিল্কের পাঞ্জাবি বেশ ভালোই বাজারদর তুলেছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভারত সরকার রিবেট বা ছাড় দেওয়া তুলে দিয়েছে। কিন্তু পুজোর সময় ৩০-৩৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার রীতি খাদিতে বহুদিনের। আবার সারা বছরই ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তার উপর প্রতি বছরই লাফিয়ে বাড়ছে সুতো, কাপড়, মজুরির দাম। ফলে বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে আগের তুলনায়।
তবে তৈরির খরচ যতই বাড়ুক, একইসঙ্গে বিক্রির পরিমাণ এবং চাহিদাও যে বাড়ছে, সেটাই আশা দেখাচ্ছে খাদি প্রস্তুতকারক এবং দোকানদারদের। ফলে নিত্য নতুন পোশাক ডিজাইন করে ক্রেতা ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সকলেই। আর ভালো এবং ছক ভাঙা পোশাক করতে পারলে, ক্রেতার অভাবও হচ্ছে না।