লোকসভা ভোটের আগে আবার ফিরে এল রামমন্দির ইস্যু। দেশের সর্বোচ্চ আদালত একটি রায়ে জানিয়েছে, আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির স্পেশাল বেঞ্চে বাবরি মসজিদ-রামমন্দির জমি বিতর্ক নিয়ে চূড়ান্ত শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, ১৯৯৪ সালে প্রদান করা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে পুনর্বিবেচনার জন্য বিষয়টিকে অন্য কোনও উচ্চতর বেঞ্চে পাঠানোর আর্জি নাকচ করে দিয়েছে। ১৯৯৪ সালের রায়ে বলা হয়েছিল, মুসলিম সমাজ শুধুই মসজিদে নমাজ পড়েন এমন নয়, যে কোনও স্থানেই নমাজ পাঠ করা যেতে পারে। এতে মুসলিম সংগঠনের আশঙ্কা ছিল, ১৯৯৪ সালের রায়টি বলবৎ হওয়ার অর্থ আগে থেকেই বাবরি মসজিদের উপর মুসলিমদের দাবিকে নস্যাৎ করা। যদিও তিন সদস্যের বেঞ্চের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অশোক ভূষণের অভিমতের বিরুদ্ধমত পোষণ করেছেন বেঞ্চের আর এক বিচারপতি আবদুল নাজির। ভিন্নমত জ্ঞাপন করে তিনি তাঁর রায়ে বলেন, ১৯৯৪ সালের রায়কে অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কারণ মুসলিম সমাজ কোথায় নমাজ পাঠ করতে পারবে কিংবা মসজিদ ইসলামের অপরিহার্য একটি অংশ কিনা সেই বিবেচনা তথা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত বিশ্বাস ও ধর্মীয় ভাবনার ভিত্তিতে। বিচারপতিদের এই মতানৈক্য সত্ত্বেও ২:১ সিদ্ধান্তগ্রহণের ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি অশোক ভূষণের রায়ই চূড়ান্ত হিসাবে গৃহীত হয়। যা লোকসভা ভোটের আগে রাম মন্দির রাজনীতিকেই ফের সামনে আনল।
দেশের শীর্ষ আদালতের এই রায়ে উল্লসিত বিজেপি। তাদের মতে, এই রায়ে মূল অযোধ্যা মামলার দ্রুত ফয়সালার পথ খুলে গেল। পাশাপাশি পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা এবং তারপর লোকসভা ভোটের ঠিক প্রাক্কালে রামমন্দির মামলার চূড়ান্ত শুনানি শুরু হওয়ায় আবার ওই ইস্যুটি রাজনৈতিক চর্চায় ফিরে আসতে চলেছে। বিজেপির মতে, এটা নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে সুফল প্রদান করবে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আশা, অযোধ্যার বিতর্কিত জমির মালিকানা সংক্রান্ত মামলার সিদ্ধান্তও তাড়তাড়ি হয়ে যাবে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও হিন্দুত্বের পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথের কথায়, ‘আমি চাই দেশের ভালোর জন্য রাম জন্মভূমির বিরোধ শীঘ্র মিটে যাক’। বিজেপির উল্লাসের মধ্যেই কাঁটা ছড়াচ্ছে কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, বিজেপি নেতারা এতই ধর্মহীন যে, প্রতিটি নির্বাচনের ৬ মাস আগে থেকে বিজেপির মনে রামকে মনে পড়ে। ক্ষমতায় এলেই আবার রামকে বনবাসে পাঠিয়ে দেয়।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন বিজেপির দুহাতেই লাড্ডু। রাফাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধীরা বিজেপিকে চাপে ফেলতে চাইছে। রামমন্দির প্রসঙ্গ সামনে এসে গেলে এইসব বিরোধিতা কাটিয়ে বেরিয়ে আসবে বিজেপি। কারণ, যখনই শুনানি হবে, তখনই আবার রামমন্দির খবরের শিরনামে চলে আসবে। বিজেপি নেতারাও তখন এই নিয়ে তাঁদের মতামত জানাতে পারবেন। ফলে রামমন্দির নিয়ে প্রচারটাও শুরু হয়ে যাবে।