রান্না করা খাবার উদ্বৃত্ত হলে, আমরা তা সোজা ফ্রিজে চালান করে দিই। ইচ্ছেমতো বার করে গরম করে খাই। এটা মোটামুটি চেনা চিত্র। কোনও খাবার যখন প্রথমবার রান্না করা হয়, তখন তার যা স্বাদ থাকে, পরে সেই স্বাদ অনেকটাই কমে যায়। তাই লেফটওভার খাবার দিয়ে চটপট বানিয়ে নেওয়া যায় নতুন পদ।
যেমন ধরুন ভাত বা ডাল এই দুটো পদ প্রায়ই আমাদের খাবার টেবিলে বাড়তি হয়। ভাত ও ডাল এক সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন চটপট খিচুড়ি। সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে পছন্দের সবজি। শুধু ভাত থাকলে আলাদা করে ডাল বানিয়ে নিয়েও খিচুড়ি বানাতে পারেন। কিংবা তার ঠিক উলটোটাও হতে পারে। বিরিয়ানি বা পোলাও থাকলে বানাতে পারেন মাংসের শাহী খিচুড়ি।
ভাত মিক্সার গ্রাইন্ডারে পেস্ট করে নিন। এই পেস্টটি দিয়ে বানাতে পারেন রাইস স্যুপ। অথবা ভাতের পেস্টের সঙ্গে ডিম ও ময়দা মিশিয়ে দারুণ প্যানকেক বানাতে পারেন। ফলের টুকরো মিশিয়ে নিলে মন্দ হয় না।
ডাল ঘন করে নিয়ে আটা বা ময়দার সঙ্গে মেখে রুটি পুরি, পরোটা বানিয়ে নিলে মোটেই খারাপ লাগবেনা। আবার মিক্সড সব্জির তরকারিতে ডাল মিশিয়ে দিতে পারেন।
রুটি, পরোটা বেঁচে গেলে তার উপর মজাদার টপিংস দিয়ে তৈরি করতে পারেন পিৎজা। বা রুটি বা পরোটাকে সমান দুটো স্লাইস করে নিন। এবার দুটো স্লাইসের মাঝখানে পছন্দের ফিলিং দিয়ে তৈরি করুন ইন্টারেস্টিং স্যান্ডউইচ। লেফটওভার লুচি দিয়ে বানাতে পারেন লুচির পায়েস। রাবড়ির মতো সুস্বাদু এই পদটি।
মাছ, মাংস বেঁচে গেলে, পাস্তা বা নুডলসে মিশিয়ে নিতে পারেন। স্যুপ বানাতে পারেন। অবশ্যই মাছের কাঁটা বা মাংসের হাড় ছাড়িয়ে নেবেন তার আগে। বোনলেস মাংস, বা কাঁটাবিহীন মাছ মিক্সার গ্রাইন্ডারে পেস্ট করে নিয়ে বানানো যেতে পারে ইন্টারেস্টিং সস। তা যেমন কোনও স্ন্যাক্সের ডিপ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, আবার মেশাতে পারেন কোনও খাবারের গ্রেভির মধ্যেও।
রান্না করা শাক সবজি বেঁচে গেলেও তা দিয়ে বানাতে পারেন পাস্তা, নুডলস ইত্যাদি। সসও বানাতে পারেন। আবার রুটি বা পরোটার স্টাফিং হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। লেফটওভার তরিতরকারি, চিকেন ইত্যাদি দিয়ে বানাতে পারেন লাসানিয়া বা ক্যাসারোলের মতো কেতাদার খাবারও।
রসগোল্লা, মিহিদানা, দই, গুলাবজামুন, সন্দেশ ইত্যাদি ফ্রিজে ২-৩ দিনের বেশি থাকলে বানিয়ে নিতে পারেন কোনও বেকড ডেজার্ট ডিশ। আজকাল তো এই ধরনের মিষ্টি দিয়ে কেকও বানানো হয়। আপনি বাড়িতেই তেমন কিছু ট্রাই করুন।
তবে লেফটওভার ফুড নিয়ে আরও একটু বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। লেফটওভার ফুড সব সময় এয়ার টাইট কন্টেইনারে ভরে ফ্রিজে রাখুন। রুটি, পরোটা, স্যান্ডউইচের মতো খাবার মুড়ে রাখুন অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে।
অনেক লেফটওভার খাবার একসঙ্গে ফ্রিজে রাখাটা একটা সমস্যা। একটা খাবারের ফ্লেভার আরও একটা খাবারে মিশে যেতে পারে। তাই চেষ্টা করুন একাধিক লেফটওভার ফুড ফ্রিজে স্টোর না করার। একান্তই রাখার প্রয়োজন হলে চেষ্টা করুন দুটো আলাদা পদের খাবারের কন্টেইনারের মধ্যে একটু ব্যবধান রাখতে। গাদাগাদি করে ফ্রিজে খাবার স্টোর করবেন না।
লেফটওভার ফুড খুব বেশিক্ষণ রুম টেম্পারেচারে রাখবেন না। খাওয়ার ঠিক মিনিট ১৫ আগে ফ্রিজ থেকে বের করে নিন। কিছুক্ষণ রেখে গরম কর নিন। চেষ্টা করুন খাবার গরম থাকতে থাকতেই খেয়ে নেওয়ার।
লেফটওভার খাবার ২-৩ দিনের বেশি ফ্রিজে স্টোর করবেন না। খাবারে সামান্য গন্ধ হলেই সেটা ফেলে দিন। অনেকে ভাবেন খাবার ভালো করে ফুটিয়ে নিলেই বুঝি সমস্ত জীবাণু মরে যাবে। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। কিছু কিছু জীবাণু খাবার হাজার ফোটালেও, ঠিকই থেকে যাবে।