আচার্য্য জগদীশচন্দ্র বসু অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামের বিখ্যাত বসুবংশে জন্মগ্রহণ করেন। এই বিক্রমপুর বঙ্গদেশের ইতিহাসে একটি সুপ্রসিদ্ধ স্থান। এই বিক্রমপুর থেকেই ‘মাতার আদেশ পালন করিবার জন্য বহু শতাব্দী পূর্বে দীপঙ্কর হিমালয় লঙ্ঘন করিয়া তিব্বত গমন করিয়াছিলেন’। বিক্রমপুর সম্বন্ধে আচার্য্য জগদীশচন্দ্র বলেছেন – “এই দেশে এখনও ভগবান তথাগতের মন্দির ও বিহারের ভগ্ন চিহ্ন স্থানে স্থানে দেখতে পাওয়া যায়।” অন্য এক স্থানে তিনি বলেছেন – “এই বিক্রমপুর বিক্রমশালী সন্তানের জন্মভূমি, মনুষ্যত্বহীন দুর্বলের নহে।” সেইজন্য বিক্রমপুর আচার্য্য জগদীশচন্দ্র বসুর ন্যায় বিক্রমশালী সন্তানকে বক্ষে ধারণ করেছিল। যখন ভারতের উপর দিয়ে সিপাহী বিদ্রোহের ঝড় বয়ে যাচ্ছিল, তার কিছুদিন পরেই আচার্য্য জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম হয়, ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর। ভারতের শাসনচক্রের পরিবর্তনের সঙ্গে তাঁর জন্মের ইতিহাস জড়িত। বিক্রমপুরের প্রাচীন আদর্শে তিনি অনুপ্রাণিত ছিলেন, সেটাই তাঁর প্রতিষ্ঠিত বসু বিজ্ঞান মন্দিরের মাধ্যমে প্রাচীন ভারতের শিক্ষা পদ্ধতিকে নতুন করে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা স্বরূপ দেখতে পাওয়া যায়। বাল্যকালে আচার্য্য জগদীশচন্দ্র বসু যে শিক্ষা পেয়েছিলেন, সেই শিক্ষাই পরবর্তী জীবনে কাজের জন্য তাঁকে উপযুক্ত করে তুলেছিল। সেই শিক্ষার জন্য তিনি ছিলেন তাঁর মাতাপিতার নিকট ঋণী। তাঁর মাতাপিতা তাঁকে বহুযত্নে মনের মতন করে ‘মানুষ’ করেছিলেন। পিতার আদর্শেই জগদীশচন্দ্র বসুর জীবনযাত্রার প্রণালী গঠিত হয়েছিল।
জগদীশচন্দ্র বসুর পিতা শ্রী ভগবানচন্দ্র বসু ছিলেন সেকালের একজন আদর্শ পুরুষ। তিনি ছিলেন ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সরকারি কাজে নিযুক্ত থাকলেও দেশের উন্নতির জন্য তিনি যথেষ্ট চেষ্টা করতেন। তিনি নানাভাবে দেশীয় শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যের উন্নতি করার চেষ্টা করেছিলেন – তাঁর বহু চেষ্টা বিফল হয়, কিন্তু তিনি কিছুতেই হতাশ হন নি। আচার্য্যের মধ্যেও তাঁর পিতার এই গুণটি বিশেষভাবে দেখা যেত। তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তিনি বহুবার বিফল হয়েছিলেন – কিন্তু কখনও হতাশ হয়ে কাজ ছেড়ে দেন নি। ১৯১৫ সালে অনুষ্ঠিত বিক্রমপুর সম্মেলনের সভাপতিরূপে সভাপতিত্ব করার সময়ে এক ভাষণে তিনি জানিয়েছিলেন –
“এক বিফল জীবনের কথা শোন, – ইহা অর্দ্ধ শতাব্দীর পূর্বের কথা। যাঁহার কথা বলিতেছি তিনি অতদিন পূর্বেও দিব্যচক্ষে দেখিয়াছিলেন যে শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষি উদ্ধার না করিলে দেশের আর কোন উপায় নাই। দেশে যখন কাপড়ের কল প্রথম স্থাপিত হয় তাহার জন্য তিনি জীবনের প্রায় সমস্ত অর্জ্জন দিয়াছিলেন। যাঁহারা প্রথম পথপ্রদর্শক হন তাঁহাদের যে গতি হয়, তাঁহার তাহাই হইয়াছিল। বিবিধ নূতন উদ্যমে তিনি বহু ক্ষতিগ্রস্ত হন। কৃষকদের সুবিধার জন্য তাঁহারই প্রযত্নে সর্বপ্রথম ফরিদপুরে লোন আফিস হয়। এখানে তাঁহার সমস্ত স্বত্ব পরকে দিয়াছিলেন। এখনও তাহাতে শতগুণ লাভ হইতেছে। তাঁহারই প্রযত্নে কৃষি ও শিল্পের উন্নতির জন্য ফরিদপুরের মেলা স্থাপিত হয়। তিনিই আসামে স্বদেশী চা বাগান স্থাপন করেন। তাহাতেও তাঁহার অনেক ক্ষতি হইয়াছিল, কিন্তু তাঁহার অংশীদারগণ এখন বহুগুণ লাভ করিতেছেন। তিনিই প্রথমে নিজব্যয়ে টেকনিকেল স্কুল স্থাপন করেন, তাহার পরিচালনে সর্বশান্ত হন। জীবনের শেষভাগে দেখিতে পাইলেন, যে তাঁহার সমস্ত জীবনের চেষ্টা ব্যর্থ হইয়াছে। ব্যর্থ? হয় ত একথা তাঁহার নিজ জীবনে প্রযুজ্য হইতে পারে, কিন্তু সেই ব্যর্থতার ফলে বহু জীবন সফল হইয়াছে। আমি আমার পিতৃদেব ৺ভগবানচন্দ্র বসুর কথা বলিতেছিলাম। তাঁহার জীবন দেখিয়া শিখিয়াছিলাম যে সার্থকতাই ক্ষুদ্র এবং বিফলতাই বৃহৎ। এইরূপে যখন ফল ও নিষ্ফলতার মধ্যে প্রভেদ ভুলিতে শিখিলাম, তখন হইতেই আমার প্রকৃত শিক্ষা আরম্ভ হইল। যদি আমার জীবনে কোন সফলতা হইয়া থাকে তবে তাহা নিষ্ফলতার স্থির ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।” (অব্যক্ত, জগদীশচন্দ্র বসু, পৃষ্ঠা: ১৫৩-৫৪)
এইরূপে তাঁর পিতার জীবন তাঁর উপরে প্রভাব বিস্তার করেছিল। ফরিদপুরের মেলা উপলক্ষেও তিনি তাঁর পিতার সম্বন্ধে বলেছিলেন – “তিনি শিল্প ও টেকনিকেল বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছিলেন এবং তখনই আমার মনের উদ্ভাবনী শক্তি প্রথম উৎসাহ পায়। শিল্পীরা যেভাবে বিশ্বকর্মার পূজা করিয়াছিল, তাহা আমার মনে যে গভীর প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল, তাহা আমার বেশ মনে আছে। মনে হইল বিশ্বকর্মা যেন ভগবানের একটি রূপ, তিনি স্রষ্টা, সমস্ত সৃষ্টিকার্য্যে নিযুক্ত এবং আমরা যেন তাঁহার হাতে যন্ত্রস্বরূপ, যাহা তিনি কোন মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য গঠন করিবেন।”
১৮৭০ সালে যখন ভগবানচন্দ্র বসু যখন ফরিদপুর থেকে বর্ধমানে সহকারী কমিশনার নিযুক্ত হয়ে বদলি হন, তখন ম্যালেরিয়ায় বহু লোকের মৃত্যু ঘটে। তাঁর ফলে অনেক বালক-বালিকা অনাথ হয়, তাঁদের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়। তাঁদের সাহায্যের জন্য ভগবানচন্দ্র নিজের বাড়িতে একটি কারখানা স্থাপন করেছিলেন। সেই কারখানায় পিতলের নানা ধরণের জিনিষ ঢালাই করা হত। তখন জগদীশচন্দ্র বসুর মাত্র দশ বছর বয়স। তিনি তাঁর মায়ের কাছ থেকে কিছু পুরানো পিতলের বাসন সংগ্রহ করেন এবং কারখানার মিস্ত্রীদের অনুরোধ করে সেগুলো থেকে একটি মাঝারি রকমের পিতলের কামান প্রস্তুত করান। সেই পিতলের কামানটি তাঁর বড় প্রিয় ছিল। তিনি সেটা নিয়ে খেলা করতেন। পরে তিনি যেসব বৈজ্ঞানিক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন বা তৈরি করেছেন, সেগুলোও তাঁর শৈশবের সেই পিতলের কামানের চেয়ে বেশি স্নেহের বস্তু হতে পারে নি।
জগদীশচন্দ্র বসুর পিতার চরিত্রের আরেকটি গুণ ছিল – ‘সাহস’। তিনি যখন ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, তখন একবার তাঁর কানে খবর পৌঁছাল যে কাছেপিঠে কোথাও ডাকাতের দল রয়েছে আর তাঁদের উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট একটি গ্রামে ডাকাতি করা। সেই খবর পেয়ে তিনি নিজে হাতিতে চড়ে পুলিশ বাহিনী নিয়ে ডাকাত ধরতে যান। ডাকাতরা ডাকাতির আগেই ছত্রভঙ্গ হয়। বাকিরা পালালেও ডাকাতদের সর্দার ধরা পড়ে এবং বিচারে তাঁর সাজা হয়। আরও একদল ডাকাতকে ধরে তিনি সাজা দিয়েছিলেন। জেলে যাবার সময়ে তাঁরা ভগবানচন্দ্রকে শাসিয়ে গিয়েছিল যে তাঁরা বদলা নেবে। তাঁদের হাতে ভগবানচন্দ্র বসুর পরিবার আক্রান্ত হয় তিন-চার বছর পরে। হঠাৎ একদিন রাত্রে দেখা গিয়েছিল যে ভগবানচন্দ্র বসুর বাড়িতে আগুন লেগেছে, বাড়ির সকলে ছিলেন ঘুমে মগ্ন, প্রবল ধোঁয়ায় সকলের ঘুম ভেঙে যায় ও সকলে বাড়ির বাইরে বের হয়ে আসেন। কিন্তু আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে কোন জিনিষ বাড়ি থেকে বের করা সম্ভবপর হয় নি। চারিদিক থেকে মুসলমান প্রতিবেশীরা সাহায্য করার জন্য ছুটে এসেছিলেন। তাঁরা যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেছিলেন বাড়ির জিনিষপত্র রক্ষার। সেই অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে প্রতিবেশীদের তৎপরতা ও ভগবানচন্দ্র বসুর সাহসে তাঁর তিন বছর বয়সের কন্যা প্রাণে রক্ষা পায়, সে সকলের অলক্ষে বাড়ির মধ্যেই রয়ে গিয়েছিল। গোটা বাড়ি আগুনে ভস্মিভূত হয়েছিল এবং নতুন ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ভগবানচন্দ্র ও তাঁর পরিবারকে প্রতিবেশীদের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল।
ভগবানচন্দ্র বসুই ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসুর প্রথম জীবনের শিক্ষক। তিনি যখন ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট তখন জগদীশচন্দ্র তাঁর কাছেই থাকতেন। তিনি বালক জগদীশচন্দ্রকে মনের মতন করে শিক্ষা দেবার চেষ্টা করতেন। কিন্তু কিছুতেই বালক জগদীশচন্দ্র বসুর কৌতুহল দমন হতে দিতেন না। রোজ সন্ধ্যায় জগদীশচন্দ্র তাঁর প্রশ্নসম্ভার নিয়ে তাঁর পিতার কাছে উপস্থিত হতেন – “বাবা, আজ অমুক জিনিষ দেখলাম। কেন এমন হয়?” ভগবানচন্দ্র এরূপ প্রশ্নে কখনও বিরক্তি প্রকাশ করতেন না বা বলতেন না “আমার সময় নেই” বা “বোকার মতন কথা বল না”। তিনি কোন বিষয়ে অজ্ঞাত হলে তাঁর পুত্রকে জানিয়ে দিতেন যে বিষয়টি তাঁর অজ্ঞাত। ওদিকে জগদীশচন্দ্রের ঠাকুরমা তাঁর নাতির প্রশ্নবাণে রীতিমতো বিরক্ত হতেন। সে সময়ে বঙ্গদেশে ইংরেজি শিক্ষার শুরু হয়েছে, ফরিদপুরেও একটি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। তাতেই সরকারি কর্মচারীদের ছেলেরা পড়ত। এছাড়া ছিল বাংলা পাঠশালা – সেটি আবার ভগবানচন্দ্র বসুর চেষ্টাতেই স্থাপিত হয়েছিল। সবাই ভেবেছিলেন যে ভগবানচন্দ্র তাঁর পুত্রকে ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি করবেন। কিন্তু ভগবানচন্দ্র তাঁর পুত্রকে প্রথমে বাংলা পাঠশালায় ভর্তি করান – উদ্দেশ্য, মাতৃভাষার সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় ঘটানো। এটাই পরে আচার্য্যের বাংলাভাষার প্রতি গভীর অনুরাগের কারণ হয়েছিল। ১৮৯৪-৯৫ সাল পর্যন্ত জগদীশচন্দ্র বাংলা ভাষাতেই তাঁর বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লিখতেন। এই সম্বন্ধে জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৫ সালে বিক্রমপুর সম্মেলনের সভাপতির ভাষণে বলেছিলেন –
“শৈশবকালে পিতৃদেব আমাকে বাঙ্গলা স্কুলে প্রেরণ করেন। তখন সন্তানদিগকে ইংরেজি স্কুলে প্রেরণ আভিজাত্যের লক্ষণ বলিয়া গণ্য হইত। স্কুলে দক্ষিণদিকে আমার পিতার মুসলমান চাপরাশীর পুত্র এবং বামে এক ধীবরপুত্র আমার সহচর ছিল। তাহাদের নিকট আমি পশুপক্ষী ও জলজন্তুর জীবনবৃত্তান্ত স্তব্ধ হইয়া শুনিতাম। সম্ভবতঃ, প্রকৃতির কার্য্য অনুসন্ধানে অনুরাগ এইসব ঘটনা হইতেই আমার মনে বদ্ধমূল হইয়াছিল। ছুটির পর যখন বয়স্যদের সহিত আমি বাড়ি ফিরিতাম, তখন মাতা আমাদের আহার্য বন্টন করিয়া দিতেন। যদিও তিনি সেকেলে ও একান্ত নিষ্ঠাবতী ছিলেন, কিন্তু এই কার্য্যে যে তাঁহার নিষ্ঠার ব্যতিক্রম হয় তাহা কখনও মনে করিতেন না। ছেলেবেলায় সখ্যতা হেতু ছোট জাতি বলিয়া যে এক স্বতন্ত্র শ্রেণীর প্রাণী আছে এবং হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে এক সমস্যা আছে তাহা বুঝিতেও পারি নাই।” (অব্যক্ত, জগদীশচন্দ্র বসু, পৃষ্ঠা: ১৪৬)
অন্যত্র তিনি বলেছেন – “শিক্ষা বিষয়ে আমার পিতৃদেবের কতকগুলি নির্দিষ্ট ধারণা ছিল, যাহা এখন ক্রমশঃ আদৃত হইতেছে। ইংরেজি স্কুল তখন একমাত্র শিক্ষার বাহন বলিয়া বিবেচিত হইত। আমার পিতার অধীন কর্মচারীরা নিজেদের ছেলেদের সেই ইংরেজি স্কুলে পাঠাইলেন, কিন্তু আমার পিতা আমাকে বাংলা পাঠশালায় পাঠাইলেন, সেখানে কৃষকের ছেলে ও অন্যেরা যাদের আজকাল ‘নীচ জাতি’ বলা হয়, তাঁহারাই আমার সঙ্গী হইল।”
বাংলা পাঠশালায় জগদীশচন্দ্রের আসল শিক্ষার শুরু হয়। এই শিক্ষাকে তিনি কখনও অবজ্ঞা করেন নি। তিনি নিজেই এই শিক্ষার সম্বন্ধে বলেছেন – “এখন আমি বেশ বুঝিতে পরিতেছি যে শৈশবে – জীবনের প্রারম্ভে – সেই গ্রাম্য পাঠশালায় আমাকে কেন পাঠান হইয়াছিল। সেখানে আমি নিজের মাতৃভাষা শিক্ষা করিয়াছি, নিজের ভাষায় ভাবিতে শিখিয়াছি আর জাতীয় সাহিত্যের মধ্য দিয়া জাতীয় সভ্যতাকে পাইয়াছি। এইরূপে আমি নিজেকে দেশের লোকের সমান বলিয়া ভাবতে পারিয়াছি এবং কখনও বৃথা গর্বে গর্বিত হইয়া নিজেকে উচ্চ আসন দি নাই।”
তাঁর পিতা যেসব মেলা ও উৎসব আয়োজন করতেন, তাতে কৃষি ও শিল্পের প্রদর্শনীর সঙ্গে যাত্রার বন্দোবস্ত থাকত। এই যাত্রা-অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষ রামায়ণ-মহাভারতের গল্পের সঙ্গে পরিচিত হত। বালক জগদীশচন্দ্রও এই যাত্রা থেকেই রামায়ণ-মহাভারতের সঙ্গে পরিচয় লাভ করেছিলেন। কিন্তু রাম-লক্ষ্মণ বা পঞ্চপাণ্ডব বা কৃষ্ণ নন, তাঁর প্রিয় পৌরাণিক চরিত্র ছিলেন কর্ণ। তিনি লিখেছেন – “কর্ণ এক আদর্শ পুরুষ। পাণ্ডবদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ, দেবতার পুত্র কিন্তু মানুষ হইলেন সুতের হাতে। তাঁর মা তাঁকে ভাসাইয়া দিলেন, শেষে তিনি সুতের দয়ায় রক্ষা পাইলেন। শেষে তাঁর পরিচয় হইল ‘সুতপুত্র’ বলিয়া। সেজন্য তাঁকে কত অত্যাচার না ভোগ করিতে হইয়াছে, সকলে তাঁকে তুচ্ছ জ্ঞান করিয়াছে। কিন্তু তবু তিনি নিজের বীর্য্য ও সাহসের দ্বারা বীর বলিয়া পরিচিত হইয়াছেন। বীর হিসাবে তিনি কারও নিকট মাথা নত করেন নাই। তিনি বীরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তাঁর মত বীর দেখা যায় না। যখন তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করা হইল, তিনি বলিলেন – আমার পরিচয়ে দরকার কি? আমিই আমার পূর্বপুরুষ। গঙ্গাকে কি কেহ জিজ্ঞাসা করে, কোন উৎস হইতে তাহার জন্ম? তাহার স্রোতেই তাহার পরিচয়। আমার কার্য্যই আমার পরিচয় দিবে। নানা বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়া তিনি বড় হইয়াছেন। অর্জুন তাঁকে নিহত করলেও আমার মনে হয় সেটি তাঁর অগৌরব নয়, সেই পরাজয়ে কর্ণেরই জয় আমি দেখিতে পাই।”
(তথ্যসূত্র:
১- অব্যক্ত, জগদীশচন্দ্র বসু, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০১৪)।
২- আচার্য্য জগদীশচন্দ্র, ডক্টর শ্রী ফণীন্দ্রনাথ বসু।
৩- বিজ্ঞানসাধক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, ড. ডি সি হাজারী, মাতৃভূমি প্রকাশনী (২০১৫)।
৪- আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, মনি বাগচি, চারুলিপি প্রকাশন।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত