বছর পরে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরছে বলে কথা। হাতে আর বেশিদিন বাকি নেই। উমার আগমন বার্তায় ইতিমধ্যেই সাজো সাজো রব পড়ে গেছে চারিদিকে। তাই শেষ মুহূর্তের আয়োজনে কোনও খামতিই রাখতে চাইছে না শহরের পুজোগুলি। সর্বত্রই প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। সেই প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই মাত্র ৩১ বছরেই শহর কলকাতার অন্যতম বড় পুজো রূপে আত্মপ্রকাশ করা বড়িশা ক্লাবের পুজো। ৫ বারের এশিয়ান পেইন্টস শারদ সম্মান জয়ী এ পুজোর এবারের থিম ‘তোমাদের বাড়ছে গতি, আমাদের দুর্গতি’। যা জনমানসে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দেবে।
একবিংশ শতাব্দীতে মানবজীবনের একটি বড় অংশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাল বা ইন্টারনেট পরিষেবা। মোবাইল ফোনের দৌলতে যা আজ প্রায় প্রত্যেকের হাতের মুঠোয়। শীঘ্রই আসতে চলেছে ‘ফাইভ জি’ও। এতে মানুষের জীবনযাত্রা হতে চলেছে আরও এক ধাপ উন্নত। তবে এই উন্নতির শিখরে পৌঁছতে গিয়ে মানুষ যে প্রকৃতির কত বড় ক্ষতি করে ফেলছে সে দিকে নজর নেই কারও। বিশেষত এই ‘থ্রিজি’, ‘ফোরজি’, ‘ফাইভজি’ পাখিদের ভয়ংকর ক্ষতি করছে। রেডিয়েশনের হাত থেকে রক্ষা না পেয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি। যাদের ছাড়া প্রকৃতিই অপূর্ণ। এই ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতেই এবার এমন একটি থিম বেছে নিয়েছে বড়িশা ক্লাব। ভাবনা ও সৃজনে শিল্পী রিন্টু দাস। বাঁশ, কাঠ, ত্রিপলের পাশাপাশি অসংখ্য হাড়ি দিয়ে গড়া হচ্ছে মন্ডপ। রয়েছে হ্যাঙার, লোহার স্ট্রাকচার আর আয়নার ব্যবহারও।
ক্লাব সভাপতি অনিমেষ চক্রবর্তী এখন খবরকে বলেন, “বড়িশা ক্লাবের পুজো এবার ৩১ তম বর্ষে পদার্পন করল। আমাদের এ বছরের থিম ‘তোমাদের বাড়ছে গতি, আমাদের দুর্গতি’। এটা আসলে বলছে পৃথিবীর সমগ্র পক্ষীকুল। এখন টুজি, থ্রিজি, ফোরজি, ফাইভজি ডেটা স্পিড মিলছে ফোনে। এর ফলে পাখিদের ওপর খুব বাজে ভাবে প্রভাব পড়ছে। তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, প্রজনন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। যার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়েই আমাদের এবারের থিম। যেখানে পাখিরা বলছে, তোমাদের
বাড়ছে গতি, আমাদের দুর্গতি। একইসঙ্গে দেবী দুর্গার কাছে আশ্রয় চাইছে তারা। এই থিমের সমগ্র ভাবনা ও পরিকল্পনা শিল্পী রিন্টু দাসের। প্রতিমাও গড়েছেন তিনি। সবমিলিয়ে আমাদের বাজেট ৪০ লাখ।” অসাধারন চিন্তা ভাবনা নিজেদের থিমে প্রস্ফুটিত করেছিল বড়িশা ক্লাব। প্রতি বছরই নিত্যনতুন থিমে দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয় বড়িশা ক্লাব। তাদের এ বছরের থিম সেই ধারা বজায় রাখতে কতটা সফল হয়, সেটাই দেখার।