শেষ হল দীর্ঘ ১৩ বছরের প্রতীক্ষা। বার্বাডোজে নতুন রূপকথা লিখল ভারত। ১৩ বছর পর আবার ক্রিকেটে বিশ্বজয়ীর খেতাব এল টিম ইন্ডিয়ার ঘরে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারালেন রোহিতরা। প্রথমে ব্যাট করে ভারত করে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান। জবাবে প্রোটিয়াদের ইনিংস শেষ হল ৮ উইকেটে ১৬৯ রানে। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর আবেগঘন হয়ে কেঁদে ফেললেন ভারতীয় দলের সকলেই। শেষ ওভারে হার্দিক পাণ্ডিয়ার হাত ধরে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নিল ভারত। বাউন্ডারি লাইনে ডেভিড মিলারের ক্যাচ দুর্দান্ত ভাবে লুফলেন সূর্যকুমার যাদব। শেষ তিন ওভারে বদলে গেল ম্যাচের রঙ। ২০০৭ সালের পর ফের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতল ‘মেন ইন ব্লু’। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ভারতীয় ইনিংসের দায়িত্ব সামলে ছিলেন রোহিত এবং সূর্যকুমার। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দু’জনেই ব্যর্থ হলেন। অবিবেচকের মতো ব্যাট করে দলের চাপ বৃদ্ধি করলেন ঋষভ পন্থও। রোহিত (৯), পন্থ (০) এবং সূর্যকুমার (৩) ৫ ওভারের মধ্যে আউট হওয়ায় চাপে পড়ে যায় ভারত। বিরাট কোহলির সঙ্গে জুটি বেঁধে দলের বিপর্যয় ঠেকালেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার অক্ষর প্যাটেল।
সারা টুর্নামেন্টে ফর্মে না থাকলেও এদিন পরিচিত আগ্রাসী মেজাজেই ইনিংস শুরু করেছিলেন বিরাট কোহলি। প্রথম ওভারেই মারলেন তিনটি চার। কিন্তু তিন উইকেট পড়ে যাওয়ায় চাপের মুখে ইনিংস গড়ার দিকে মন দেন তিনি। আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করেন অক্ষর। ৩১ বলে ৪৭ রান করলেন ১টি চার এবং ৪টি ছয়ের সাহায্যে। উইকেটের অন্য দিক আগলে রেখেছিলেন বিরাট। শিবম দুবে কিছুটা লড়াই করার চেষ্টা করলেন ফাইনালে প্রতিযোগিতার প্রথম অর্ধশতরান করলেন কোহলি। আউট হলেন ৫৯ বলে ৭৬ রান করে। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৬টি চার এবং ২টি ছক্কা। শিবম করলেন ১৬ বলে ২৭। ৩টি চার এবং ১টি ছয় মারেন তিনি। বিরাট-শিবম জুটির ৭২ রানের শেষে হার্দিক অপরাজিত থাকেন ৫ রান করে। জাদেজা আউট হন ২ রান করে। দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার কেশব মহারাজ ২৩ রানে ২ উইকেট নিলেন। বল করতে এসে প্রথম ওভারেই রোহিত এবং পন্থকে আউট করে তিনি চাপে ফেলে দেন ভারতকে। ২৬ রানে ২ উইকেট অনরিখ নোখিয়া। ৩৬ রানে ১ উইকেট কাগিসো রাবাডার। ৪৯ রান খরচ করে ১ উইকেট নিলেন মার্কো জানসেন।
১৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুটি উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। রেজা হেনড্রিকসকে (৪) আউট করেন যশপ্রীত বুমরা। এডেন মার্করামকে ফেরান (৪) আরশদীপ সিংহ। ১২ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলের ইনিংসের হাল ধরেন কুইন্টন ডিকক এবং ট্রিস্টান স্টাবস। তৃতীয় উইকেটে তাঁদের জুটির কিছুটা চাপে ফেলে দেয় রোহিতদের। তাঁদের জুটি ভাঙেন অক্ষর। স্টাবস আউট হন ২১ বলে ৩১ রান করে। মারলেন ৩টি চার এবং ১টি ছয়। তাঁর পর ডিককের সঙ্গে জুটি বাঁধেন হেনরিক ক্লাসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার রান তোলার গতি আটকাতে পারেননি ভারতীয় বোলারেরা। ডিকককে আউট করেন আরশদীপ। তাঁর ৩১ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে রয়েছে ৪টি চার এবং ১টি ছক্কা। তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। ক্লাসেনের দুরন্ত অর্ধশতরানের পর মনে হচ্ছিল যে, প্রোটিয়াদের বিশ্বজয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত হার্দিক তাঁকে আউট করেন। লড়াইয়ে ফেরে টিম ইন্ডিয়া। পাল্টা চাপে পড়ে যায় প্রোটিয়ারা। জানসেনও (২) দলকে ভরসা দিতে পারলেন না। তিনি আউট হলেন বুমরার বলে। পর পর ২ উইকেট হারানোর পর ডেভিড মিলার এবং মহারাজ চাপ সামলাতে পারলেন না। ১৮ এবং ১৯ নম্বর ওভারে বুমরা এবং আরশদীপ দিলেন যথাক্রমে ২ এবং ৪ রান। জিততে হলে শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। হার্দিকের বলে ছয় মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে সূর্যকুমারের হাতে ধরা পড়েন মরিয়া মিলার। এই উইকেটই ভারতকে প্রায় জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ১৬৯ রানে শেষ হয় প্রোটিয়াদের ইনিংস। ভারতের সফলতম বোলার হার্দিক ২০ রানে ৩ উইকেট নিলেন। ১৮ রানে ২ উইকেট বুমরার। ২০ রানে ২ উইকেট আরশদীপের। ৪৯ রানে ১ উইকেট অক্ষরের। ফাইনালে ৪৫ রান খরচ করলেও উইকেটহীন থাকতে হল কুলদীপ যাদবকে। ম্যাচের সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া হয় বিরাট কোহলিকে। টুর্নামেন্ট সেরার শিরোপা উঠেছে যশপ্রীত বুমরার মাথায়।