যেন মগের মুলুক! বাড়িতে টলস্টয়ের বই রাখলেও এবার আপনার কপালে জুটে যেতে পারে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা। হ্যাঁ, রাশিয়ার বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক লিও টলস্টয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ উপন্যাস নিয়ে প্রশ্ন তুলল বম্বে হাইকোর্ট। দেশদ্রোহিতার দায়ে অভিযুক্ত মহারাষ্ট্রের সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ ভার্নন গনজালভেসকে ওই বই বাড়িতে রাখার জন্য কৈফিয়ত তলব করেছেন বিচারপতি। তাঁর প্রশ্ন, বাড়িতে রাষ্ট্রদ্রোহী বইপত্র এবং সিডি ছিল কেন?
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর উস্কানিমূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন মাওবাদী সহমর্মীহিসেবে চিহ্নিত ভার্নন গনজালভেস। তল্লাশি অভিযানে তাঁর বাড়ি থেকে বেশ কিছু বই ও সিডি উদ্ধার করে পুলিশ। যার মধ্যে ছিল, কবীর কলামঞ্চের সিডি ‘রাষ্ট্র দমন বিরোধী’ অর্থাৎ ‘রাষ্ট্রীয় দমনের বিরুদ্ধে’, কার্ল মার্ক্সের বই এবং লিও টলস্টয়ের লেখা বিশ্বজয়ী উপন্যাসটি। ১৮১২ সালে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণের প্রেক্ষাপটেই রচিত এই ওয়ার অ্যান্ড পিস। যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৬৯ সালে।
গনজালভেসের জামিনের আবেদনের শুনানিতে বুধবার বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি সারঙ্গ কোতওয়াল ওই ‘আপত্তিকর’ বইটি বাড়িতে রাখার ব্যাখ্যা জানতে চান ওই সমাজকর্মীকে। বিচারপতি কোতওয়াল গনজালভেসকে প্রশ্ন করেন, ‘রাষ্ট্র দমন বিরোধী নামক সিডির শিরোনাম থেকে বোঝা যাচ্ছে তাতে দেশ-বিরোধী কিছু রয়েছে। আর ওয়ার অ্যান্ড পিস বইটি অন্য কোনও দেশের যুদ্ধ যুদ্ধ নিয়ে লেখা। এমন আপত্তিকর জিনিসপত্র বাড়িতে রেখেছেন কেন? এর ব্যাখ্যা আপনাকে দিতে হবে।’
উল্লেখ্য, গনজালভেসের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক ভাষণের অভিযোগ এনেছে পুনে পুলিশ। তাঁর ভাষণের পরের দিন দলিত সম্প্রদায়ের এক সভায় ভীমা-কোরেগাঁও এলাকায় একজন খুন হন। মামলায় গনজালভেসের পরিকল্পিত অপরাধের স্বপক্ষে অন্যতম অকাট্য প্রমাণ হিসেবে তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা টলস্টয়ের উপন্যাসটি দাখিল করেছে পুলিশ। যদিও তার কম্পিউটার ও হার্ড ডিস্ক ঘেঁটে মাওবাদী সহমর্মিতা বা দেশদ্রোহিতার কোনও প্রমাণ মেলেনি বলেই জানা গেছে।