মাঝদুপুর। জামশেদপুরের আদিত্যপুর শিল্পাঞ্চলে গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা। অন্য সময় হাঁফ ফেলার সময় থাকে না প্রকাশ তাঁতি, কার্তিক রজকদের। পণ্য খালাসের কাজ করেই দিনে পাঁচ-সাতশো টাকা রোজগার হত। কিন্তু ইদানীং প্রায় দিনই চুপচাপ বসে থাকা। ব্যস্ত সময়েও চা-এর দোকানে গুলতানি মেরে সময় কাটাতে হচ্ছে। কারণ, শিল্পাঞ্চলের বেশিরভাগ কারখানাতেই উৎপাদন ছাঁটাই চলছে। তাই কাঁচামাল আনা বা তৈরি জিনিস জোগানের দরকারও কমেছে।
গাড়ির চেসিসের একটি অংশ তৈরির কারখানায় কাজ করেন মাইকেল চামার। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগেও সেই কারখানা বন্ধ ছিল। ফের নাকি বন্ধ হতে পারে। কর্মীরা আশঙ্কায় কাঁটা। কারখানা বন্ধ থাকলে বাধ্যতামূলক ছুটি নিতে হয়। ছুটি ফুরোলে বেতনে কোপ। অন্য কারখানার মতো গাড়ির যন্ত্রাংশ, রবারের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানাতেও তিন শিফটেই কাজ হত। এখন মাত্র এক শিফটেই। কাজও হারাচ্ছেন অনেকে। আগে কারখানায় ক্রেন চালাতেন। এখন প্রায় বেকার।
দেশ জুড়ে গাড়ি শিল্পে আকাল। ২৮৬ জন গাড়ির ডিলার ঝাঁপ বন্ধ করেছেন। কাজ গিয়েছে প্রায় ৩৫,০০০ মানুষের। ডিলারদের সংগঠন ফেডারেশন অব অটোমোবাইল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ফাডা) সিইও সহর্ষ দামানির দাবি, বিক্রি কমায় এপ্রিল-জুলাইয়ে চালু ডিলারশিপেও কাজ হারিয়েছেন প্রায় দু’লক্ষ কর্মী। সব মিলিয়ে ২.৩৫ লক্ষ। সেই আঁচে জ্বলছে জামশেদপুরের মতো গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানাগুলিতেও।
বরাত কমছে আদিত্যপুর শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলির। তাই তারাও মাঝে মধ্যেই কাজ বন্ধ রাখছে। আদিত্যপুর শিল্পাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা ঝাড়খণ্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কর্তারা জানাচ্ছেন, ৩০-৪০ শতাংশ অস্থায়ী ও ঠিকা কর্মীর হয় কাজ গিয়েছে, নয়তো সাময়িক বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কর্মীদের ছুটি নিতে বলা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে আদিত্যপুর শিল্পতালুকে এখন সাইরেনের শব্দ কম। সেখানে শুধুই ফিসফিসানি, এবার কাজ যাবে কার? বন্ধ হবে কোন কারখানা?