বর্ষাকাল মানেই কি জমিয়ে খিচুড়ি ইলিশ? বৃষ্টির অজুহাতে কাজকম্ম শিকেয় তুলে রেনি ডে? বিকেল বেলায় মুড়ি তেলেভাজা সহযোগে গরম চায়ে আরামের চুমুক? হ্যাঁ মশাই মানছি। বাঙালির কাছে এগুলো হল বর্ষাকালের সমার্থক। কিন্তু তা বলে নিজের বাড়িটার যত্ন নিতে ভুলে যাবেন না যেন আবার। বরং উল্টে বর্ষাকালে বাড়ির অন্দরসজ্জায় একটু বাড়তি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
আসলে অন্দর সাজ মানেই শুধু আপনার গৃহকোণের সৌন্দর্য বৃদ্ধি নয়। বাড়ির প্রতি যত্ন সুন্দর অন্দরসজ্জার প্রাথমিক শর্ত। আর বর্ষাকালে বাড়ির একটু বাড়তি যত্ন করতে হবে বইকি।
কেউ কেউ চোখ কপালে তুলে প্রশ্ন করতেই পারেন- বর্ষাকালে আবার অন্দর সজ্জা কি? সারাদিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি। জমা জল ঠেলে, কাদা পায়ে বাড়িতে পা দিলেই তো গৃহসজ্জার অর্ধেক দফারফা। তার উপরে জানলা-দরজা সব বন্ধ রাখতে হয়। ফলে ঘরে সারাক্ষণ স্যাঁতস্যাঁতে ভাব। এর মধ্যে কাঁহাতক আর বাড়ি সাজাতে ভালো লাগে? ঠিক কথা। তবে এই যে দুটি মোক্ষম সমস্যার কথা বললেন, বর্ষাকালে অন্দরসজ্জার দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য, সেই দুটিই যথেষ্ট।
আগেই বলেছি বর্ষাকালে একটা অন্যতম সমস্যা হলো, স্যাঁতস্যাঁতে ভাব। যাঁদের একটু পুরনো আমলের বাড়ি তাঁদের এই সমস্যাটা আরও বেশি। ইচ্ছে হলে
বর্ষার মরশুম শুরুর আগেই বাড়ি রঙ করিয়ে নিন। এখন তো ময়শ্চার রেসিস্ট্যান্ট বা আর্দ্রতা নিরোধক রঙ পাওয়া যায়। অসুবিধা নেই। বাড়ি রঙ করার আগে অবশ্যই দেখে নেবেন বাড়ির কোনও অংশে ড্যাম্প বা নোনা ধরেছে কিনা। ব্যবস্থা নিন।
এই মরশুমে বেশিরভাগ সময়েই বাড়ির জানলা-দরজা বন্ধ থাকে। ফলে আলো হাওয়া ঠিক মতো ঢুকতে পারেনা। সব সময় কিন্তু বাড়ি এমন বদ্ধ অবস্থায় রাখার দরকার নেই। সবসময় তো আর বৃষ্টি হচ্ছেনা। আর বৃষ্টি হলেও জলের ছাঁট সবসময় বাড়ির মধ্যে ঢোকেও না। তাই যখন এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হবে তখনই জানলা বন্ধ করুন।
এই সময়টা ভারী পর্দা ব্যবহার না করে, ফুরফুরে হালকা কাপড়ের পর্দা ব্যবহার করুন। ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। রক সল্টের ব্যবহারেও ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে ভাব কমতে পারে।
বর্ষাকালে অনেকেই ঘরে ভেজা জামা কাপড় মেলেন। এটাও কিন্তু ঘর স্যাঁতস্যাঁতে হওয়ার একটা বড় কারণ। খোলা জায়গাতেই, বা বারান্দার মতো জায়গাতে জামা কাপড় শুকোতে দিন।
নজর থাকুক রান্নাঘরেও। কিচেন চিমনি, এক্সস্ট ফ্যান মাস্ট। কোনও কিছু রান্না করার সময় ঢাকা দিয়ে রান্না করুন।
মেঝেতে কার্পেট পাতার কথা ভুলেও ভাববেন না। মেঝে শুকনো রাখুন। ডোরম্যাট এই সময় ভীষণ কাজে লাগে। দেখতে সুন্দর, সহজে পরিষ্কার করা যায়, এমন ডোরম্যাট ব্যবহার করুন। ভিজে ছাতা, রেনকোট আলাদা করে শুকোতে দেওয়ার একটা জায়গা আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে রাখুন।
বর্ষাকালে সূর্যের আলো তেমন না থাকায় এমনিই একটা বিষাদগ্রস্ত পরিবেশ তৈরি হয়। মনেও লাগে সেই অবসাদের ছোঁয়া। তাই এই সময় ঘরে একটু রঙের ছোঁয়া আনা জরুরি। পর্দা। কুশন কভার, বিছানার চাদর, সবেতেই থাকুক উজ্জ্বল রঙের ছোঁয়া। একটু কোয়ার্কি প্রিন্টের পর্দা, কুশন কভার, বিছানার চাদর মন্দ হবেনা। ফ্লোরাল প্রিন্ট সব সময়েই অন্দর সজ্জায় একটা ফ্রেশ লুক তৈরি করতে সাহায্য করে।
শুধু তাই নয়। কফি মগ, কোস্টার, ইত্যাদি ছোট ছোট জরুরি অথচ শৌখিন জিনিষও হতে পারে রঙিন। মজাদার। পিতলের বাসন উজ্জ্বল হয়। ডাইনিং রুম সাজাতে পারেন পিতলের বাসন দিয়ে। বাড়িতে অতিথি এলে তারিফ পাবেন হলফ করে বলতে পারি।
ব্যবহার করতে পারেন কৃত্রিম ডিজাইনার আলো বা ল্যাম্প শেড। এথনিক ডিজাইনের সুদৃশ্য লণ্ঠন একটা অন্য মেজাজ তৈরি করবে। সবচাইতে ভাল হয় যদি সুগন্ধি মোমবাতি ব্যবহার করা যায়। মুড আপলিফটমেন্টের জন্য দারুণ।
ছোট ছোট ভালো লাগার উপরে জোর দিন। জানলার সামনে উইন্ড চাইম লাগান। হাওয়ার দাপটে উইন্ড চাইমের শব্দ মন ভালো করে দিতে পারে। টেবিল হয়তো ফার্ন দিয়ে সাজালেন। বা পিতলের রেকাবিতে রাখলেন বাগানের টাটকা ফুল। এভাবেই ভালবাসায়, যত্নে আপনার বর্ষার অন্দর সাজ হয়ে উঠুক ঝকঝকে, ফুরফুরে, প্রাণবন্ত।