কয়েকদিন আগেই শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর চীন সফর। তার কিছুদিনের মধ্যেই বাতিল হল মাননীয়ার শিকাগো সফর। ১৮৯৩ সালে Parliament of World’s Religions এর মঞ্চে স্বামী বিবেকানন্দের ভাষণের ১২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আগামী ২৬শে আগস্ট শিকাগোতে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এবং বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটি যৌথভাবে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের আমন্ত্রণে সেখানে যাওয়ার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর।
কয়েকদিন আগে বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে শিকাগোর অনুষ্ঠানটি অনিবার্য কারণবসত বাতিল করতে হয়েছে। চিঠিতে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সহকারী সাধারণ সম্পাদক স্বামী অভিরামানন্দের জীবনাবসানের কথাও। কিন্তু হাওড়াতে স্বামী অভিরামানন্দের মৃত্যুর ঘটনায় শিকাগোয় অনুষ্ঠান করতে বাধা কোথায় তা স্পষ্ট নয়।
বিভিন্ন মহলে শোনা যাচ্ছে এই অনুষ্ঠান বাতিল করতে নাকি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ওপর চাপ এসেছে কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রকের তরফে। একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের আমন্ত্রণে স্বামীজীর ভাষণের ১২৫তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে শিকাগো যাচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার কয়েকদিন আগে একই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর আমেরিকা যাওয়াটা তাই অনভিপ্রেত ঠেকেছে কেন্দ্রের কাছে? কয়েকদিনের ব্যবধানে চীন ও শিকাগো সফর বাতিল হওয়াটা কি শুধুই কাকতালীয়?
চীনের কথাই ধরা যাক। বিমানে ওঠার কয়েকঘন্টা আগে অকস্মাৎ সফর বাতিলের ঘোষণা করা হয়। কারণ – উপযুক্ত পর্যায়ে যে রাজনৈতিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর সে ব্যাপারে চীনের তরফে কোনও সদর্থক সাড়া মেলেনি। যদিও এটা মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিদেশ-সফর ছিল না। কয়েকমাস আগে কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী নিজে মুখ্যমন্ত্রিকে অনুরোধ করেন এই সফরে যাওয়ার জন্য। সেই কারণেই সফর বাতিলের দায়টা কেন্দ্রের ঘাড়েই বর্তাবে। তাদের গাফিলতির কারণেই হয়তো চীনের তরফে যথাসময়ে প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
উল্লেখ্য, যদিও মুখ্যমন্ত্রীর সফর বাতিল হয়েছে, স্বামীজীর শিকাগো সম্ভাষণের ১২৫তম বার্ষিকী পূর্ণ মর্যাদার সাথে পালন করবে রাজ্য সরকার। রাজ্যের সমস্ত স্কুলে স্বামীজীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে চরিত্র গঠনের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। স্বামী বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে একটি বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে যেখানে প্রায় এক লক্ষ ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করবে।
স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি – এঁরা বাংলার, তথা দেশের, বরেণ্য মনীষী। তাঁদেরও যখন রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতার ঘুঁটিতে পরিণত করা হয়, তা সমাজের পক্ষে মঙ্গলময় নয়। কিন্তু, আচ্ছে দিনের এই নতুন ভারতে সবই সম্ভব।
সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ।