নুয়ান কুলাশেখরার বলটা যখন ব্যাট ছুঁয়ে বাউন্ডারি লাইন পার করল তখন উত্তাল হয়ে উঠল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে গোটা দেশ। ১৯৮৩ সালের পর আবার একবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেল ভারত। এই ২০১১ এর ২ এপ্রিল যে স্বপ্নপূরণ হল ভারতবাসীর সেই স্বপ্নের অন্যতম কান্ডারীর জন্মদিন আজ। মহেন্দ্র সিং ধোনি। ক্রিকেট জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও তিনি জ্বলে ওঠেন নিজের প্রতিভার আলোয়।
১৯৮১ সালে আজকের দিনে অধুনা ঝাড়খণ্ডে এই ক্রিকেট নক্ষত্রের জন্ম হয়। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটে প্রতি আগ্রহ তাঁকে আজকের ধোনি করে তুলেছে। জীবনে অনেক উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিনিশারের তকমা অর্জন করেছেন। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ করেন ঠান্ডার মাথার এই প্রতিভা। তাই বিশ্ববাসী আজ তাঁকে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামে খ্যাত। ক্রিকেটের সব ফরম্যাটের অধিনায়ক পদ থেকে সরে এসেছেন তিনি, তাও তিনিই ভারতের ‘অঘোষিত’ অধিনায়ক।
২৩ ডিসেম্বর ২০০৪ সালটা ভারতবাসীর কাছে অন্যতম স্বরণীয় দিন। এইদিন ৭ নম্বর জার্সি গায়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক ঘটে ধোনির। আর একবছর পরই টেস্ট ক্রিকেটে অভিযান শুরু করেন তিনি। তারপর একের পর এক রেকর্ড জুড়তে শুরু হয় তাঁর নামের পাশে। প্রথম রেকর্ড হিসেবে ২০০৭ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনি তার প্রিয় তারকা খেলোয়াড় অ্যাডাম গিলক্রিস্টের আন্তর্জাতিক রেকর্ড ভাঙেন। ইংল্যান্ডের ৫ জন খেলোয়াড়ের ক্যাচ এবং একটি স্ট্যাম্পিং করে এ নতুন রেকর্ডে নাম লেখান ধোনি। এছাড়াও এডাম গিলক্রিস্ট, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, মার্ক বাউচার এবং কুমার সাঙ্গাকারা’র পর বিশ্বের ৬ষ্ঠ উইকেটরক্ষক হিসেবে মহেন্দ্র সিং ধোনি ৪০০০ হাজার রান ও ১০০ আউট করে একদিনের ক্রিকেটে ডাবল অর্জনকারী খেলোয়াড়। এছাড়াও, মাত্র ১১৪ ম্যাচ খেলে তিনি ডাবল অর্জন করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন।
ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সফলতম অধিনায়ক তিনি৷ দু-দু’বার বিশ্বজয়ের মুকুট তাঁর মাথায়৷ নেতা হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটে উচ্চতার শিখরে পৌঁছেছিলেন ধোনি৷ ২০০৭ সালে প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপে ধোনির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত৷ তারপর ধোনির নেতৃত্বে ২০১১ ওয়ান ডে বিশ্বকাপ জেতে টিম ইন্ডিয়া৷ এছাড়াও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং টেস্ট ক্রিকেটে ভারতকে শীর্ষে নিয়ে যান মাহি। পাঁচ বছর আগে টেস্ট ক্রিকেট থেক অবসর নিলেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ধোনি এখনও বিরাটের দলে অপরিহার্য অঙ্গ৷
কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসে বহুবার তাঁকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। বহু বিশেষজ্ঞ তাঁকে অবসরের মন্ত্র শুনিয়েছেন কিন্তু ধোনি কখনই মেজাজ হারান না। কারণ মুখের ওপর জবাব দেওয়াটা তাঁর স্বভাব বিরুদ্ধ তাই তিনি বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন মাঠে। অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনিই যে বিশ্বের সেরা উইকেট রক্ষক সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন সমালোচকদের। দীর্ঘ ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনে হয়তো তাঁর নতুন করে কিছু প্ৰমাণ করার নেই তবুও নাম যেহেতু মহেন্দ্র সিং ধোনি তাই নিজেকে সবসময় উজাড় করে দেন তিনি। তাঁর এই অজানা ‘করে দেখানোর’ খিদে অনেক নতুন প্রতিভাকে উজ্জীবিত করে। তাই তাঁর জন্মদিনে শেষ বার্তা হিসেবে বলা যায় অনুপ্রেরণার আর এক নাম সেরার সেরা মহেন্দ্র সিং ধোনি।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত