গতকাল দক্ষিণ কলকাতার জিডি বিড়লা হাইস্কুলের একটি শৌচাগার থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় স্কুলেরই এক ছাত্রী কৃত্তিকা পালকে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যু নিয়ে ক্রমশই দানা বাঁধছে সন্দেহ। প্রাথমিক তদন্তের পর গোয়েন্দারা অনুমান করছেন কৃত্তিকার এই পরিণতির পিছনে অনেকটা দায়ী স্কুলের গাফিলতি।
গতকাল সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে, ঘটনার কিছুক্ষণ আগেও সহপাঠীদের সঙ্গে হেসেই কথা বলছিল সে, স্বাভাবিক ছিল তাঁর আচরণ। এরপর ৫ পিরিয়ড শেষ হতেই সে তাঁর সহপাঠীদের বলে তাঁর মাথা যন্ত্রণা করছে তাই সে সিক রুমে যাচ্ছে। এরপর ১:২৯-এ সিক রুমে যাওয়ার বদলে সে সোজা চলে যায় বাথরুমে। ষষ্ঠ পিরিয়ডে শিক্ষিকা তাঁর খোঁজ করলে সহপাঠীদের থেকে জানতে পারেন সে সিক রুমে। শেষ হয়ে যায় ৬ পিরিয়ডেও। ৭ পিরিয়ডে ফের তাঁর খোঁজ পড়ে এরপর শুরু হয় খোঁজ গোটা স্কুল খুঁজে ফেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি, শেষে তাঁকে খুঁজতে যাওয়া হয় স্কুলের শৌচালয়ে। বন্ধ দরজার ওপর থেকে দেখা যায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে কৃত্তিকা। দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
শৌচাগার থেকে তিন পাতার একটি ‘সুইসাইড নোট’ মিলেছে। তিনটি পাতাতেই ওই ছাত্রী লিখেছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী।’ কিন্তু তারপরেও থেকে গিয়ে খটকা। উঠছে প্রশ্ন। নিজেকে মেরে ফেলার জন্য মুখে প্লাস্টিক কেন বাঁধল কৃত্তিকা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারী অফিসাররাও। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না-এলেও দেহটি প্রাথমিক পরীক্ষার ভিত্তিতে লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই কিশোরীর। তার হাতে একাধিক ক্ষত থাকলেও এমন কোনও শিরা কাটেনি, যার ফলে মৃত্যু হতে পারে। রক্ত বেরিয়েছে তিন ফোঁটা। সুইসাইড নোটের শেষ পাতায় নিজের মৃত্যুর বর্ণনা দিয়েছে ওই ছাত্রী। এ ভাবে নিজের ‘স্লো-ডেথ’ ঘটানোর বিষয়টি ভাবাচ্ছে পুলিশকর্তাদের।
সহপাঠীরা জানিয়েছে, বছর চারেক ধরে কোরিয়ান মার্শাল আর্ট শিখত কৃত্তিকা। স্বভাবে শান্ত হলেও ছিল শক্ত মনে মেয়ে। কিশোরীর মা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটে পড়ার স্বপ্ন ছিল মেয়ের। তাই তিন মাস ভালো করে ঘুমায়নি সে। নিজেকে তৈরি করছিল কৃত্তিকা। সূত্রের খবর, সুইসাইড নোটে নিজের মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেনি কৃত্তিকা। বরং লিখে গিয়েছে, “পুলিশেরও জানার অধিকার নেই যে আমি কেন এমন চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” পুলিশের দাবি, এর পাশাপাশি কৃত্তিকা ওই সুইসাইড নোটে লিখেছে, “আমার এমন পরিণতি হলে তুমি চরম কষ্ট পাবে, তোমার নিজেকে অভিশপ্ত মনে হবে।” পুলিশের অনুমান, শুক্রবার বাথরুমে বসেই সুইসাইড করার আগের মুহূর্তে এই নোট লিখেছে কৃত্তিকা। পুলিশের দাবি, লেখার বয়ান থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে কারও প্রতি চাপা ক্ষোভ-অভিমান-রাগ ছিল মেয়েটির। কিন্তু কে সে, তার কোনও উল্লেখ নিজের সুইসাইড নোটে রাখেনি কৃত্তিকা, এমনটাই জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
কৃত্তিকার রহস্য মৃত্যুর তদন্তে নেমেছে লালাবাজারের হোমিসাইড শাখা। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরাও। খতিয়ে দেখা হচ্ছে কিশোরীর ফোনের কললিস্ট। সংগ্রহ করা হয়েছে সিসিটিভি ফুটেজ। ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে কৃত্তিকার দেহ। এখন অপেক্ষা রিপোর্টের। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই সঠিক ভাবে কৃত্তিকার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।