রানাঘাট কেন্দ্রের অন্তর্গত নবদ্বীপ লোকসভা কেন্দ্রের ভোট প্রচারে রূপালি বিশ্বাসের সমর্থনে জনসভা করেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। তিনি এই সভা থেকে মানুষের উদ্দেশ্যে বার্তা দেন। তিনি জানান, কেবল তিনটি কারণে মমতাকে জেতাতে হবে। এই সভামঞ্চ থেকে বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, বাংলা থেকে বিজেপি উৎখাত করার এটাই সেরা সময়। বিজেপি থাকলে বাংলায় স্বাধীনতা থাকবে না। মানুষ্কে পরাধীন হয়ে বাস করতে হবে।
অভিষেক বলেন, যার জন্য আজ এখানে আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি তিনি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের স্নেহধন্যা প্রার্থী রূপালি বিশ্বাস জোড়াফুলের হয়ে ভোটে লড়ছেন। আপনাদের পাশে থাকবেন তিনি। আপনাদের উন্নয়নে সাহায্য করবেন। আপনাদের সমর্থনকে পাথেয় করে এগিয়ে যাবেন।
বিদেশিরা চলে গেছে কিন্তু বিজেপির শাসনকালে মানুষ পরাধীন হয়ে বসে আছেন। বাংলার দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা ভারতের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা সম্মিলিত হয়েছেন জাতি দল নির্বিশেষে তাঁদেরকে সম্মান জানাই।
বিজেপির সময়ে কে কোথায় থাকবে কে কি খাবে তার নিধান দিচ্ছে দিল্লীতে বসে থাকা দুই ব্যক্তি। সব রাজনৈতিক দলগুলিকে ভয় দেখিয়ে ধমকে রেখে দিয়েছেন। কেবল মাত্র বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মোদী হোক, শাহ হোক কাউকেই ভয় পায়না। নবদ্বীপের মাটিকে সম্মান জানাচ্ছি। আমি সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাসী। আমি বিশ্বাস করি মানুষে। ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ, মানুষে মানুষে হানাহানি বন্ধ হোক। বিজেপির উগ্রজাতীয়তাবাদী মনোভাবকে সমর্থন করার কোনো মানেই হয় না। ।
এই জনসভা থেকে তিনি মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আবেদন করছি কেবল তিনটি কারণের জন্য মমতা বন্দোপাধ্যায়কে ভোট দিন। প্রথম কারণ হল, মূল্যবৃদ্ধি। মুল্যবৃদ্ধির কারনে মানুষ জর্জরিত। আর তার থেকেও বেশি তা হল ধর্ম নিয়ে মাতামাতি। উগ্র জাতীয়তাবাদ যদি বাংলায় দেখা যায় তবে মানুষের নিজস্বতা বলে কিছু থাকবে না। বাংলা ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য হোক। এখানে সব ধর্মের মানুষ শান্তিতে বাস করুন সব সুবিধা পেলে। একটা শান্তিপ্রিয় রাজ্য হোক বাংলা। আর সবচেয়ে বেশি কারণ হল, মোদীর ভুয়ো প্রকল্পের উপকার কেউ পায়নি। প্রতি ভারতবাসীর ব্যাংকে ১৫ লক্ষ টাকা ঢোকার ছিল কেউ কি ১৫ টাকা পেয়েছে? আর বলেছিলেন আচ্ছে দিন আসবে। কোথায় আচ্ছে দিন? মোদী আচ্ছে দিন আনতে পারেন না। আচ্ছে দিন আনতে ব্যর্থ। প্রতি বছর দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু উলটে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে।
মমতা বন্দোপাধ্যায় সব সময় মানুষের কথা ভাবেন। মানুষের পাশে থাকেন। উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে কাজ করেন। বাংলাকে নতুন করে সাজিয়েছেন। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী, যুবশ্রী পেয়েছেন। সধারণ মানুষ উপকৃত হয়েছেন। অভিষেক জানান, আজ আমি আপনাদের বলছি, ভোট রেজাল্ট বেরোনোর বিজেপি থাকলে পর ২৩ থেকে ৩০ নতুন মন্ত্রীরা শপথ নেবে আরো অনেক কাজ থাকবে সেগুলো হবে তারপর আবার যে কে সেই। পয়লা জুন থেকে আমার গ্যাসের দাম বাড়বে। পেট্রোলের দাম বাড়বে। দাঙ্গা হাঙ্গামা, ধর্ম নিয়ে মাতামাতি হবে। এবার আপনারা ভেবে বাড়ি যান যে কি করবেন। আপনাদের আশীর্বাদ ছাড়া কিছু সম্ভব নয়। আপনারা বিচার করুন কি করবেন। তবে মা-মাটি-মানুষের পাশে থাকলে আপনারা শান্তির পরিবেশে ভালোভাবে থাকতে পারবেন।
এরপরে বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “আসছে ২৩ মে-র পরে ভারতীয় জনতা পার্টিকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে এই নির্বাচনে বিজেপির কোনও অঙ্ক কাজ করবে না। যারা আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষকে ঠকায়, যাদের জন্যে সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ হয়, তাঁদের আপনারা ফিরতে দেবেন না এটা আমার বিশ্বাস। ২০১৪ সালে আমরা যখন ভোটে লড়েছিলাম আমরা বলেছিলাম সাম্প্রদায়িক বিজেপি, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস, হার্মাদ সিপিএম-এর সঙ্গে লড়াই ছিল ।এবার লড়াইটা মূলত দুটো আদর্শের, দুটো মানুষের। এক হল দুর্নীতিগ্রস্ত মোদী এবং সততার প্রতীক বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সবাই বিজেপির বশ্যতা মানলেও মমতা মাথা নোয়ায়নি। তাঁকে ধমকে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ মোদী যত এরকম করেছেন বাংলায় তত বেড়েছে উন্নয়নের খতিয়ান। মমতার সমর্থনে তত মানুষ রাস্তায় নেমেছে”।
অভিষেক বন্দোপাধ্যায় মোদীকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন, মোদী জোর গলায় বলেন আমি সেনাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। কিন্তু মোদী কে ভারতীয় সেনাদের স্বাধীনতা দেবার? এদিন অভিষেক ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, মোদী কোন হরিদাস পাল যে, সে স্বাধীনতা দেবে? যারা দেশের সেনাদের বাচ্চা দের ভোট পাবার অস্ত্র করে সেই দলের মেরুদন্ড আছে কিনা সন্দেহ আছে। অভিষেক বলেন, মোদীর এত ঔদ্ধত্য এত অহংকার যে ১০৩ কোটি ভারতবাসীকে নোটবন্দীর নামে লাইনে দাড় করান। আপনি এবার লাঠি আর টুপি নিয়ে রেডি থাকুন ২৩ এর পর আপনাকে ওই টুপি লাঠি নিয়ে রাস্তায় দাড়াতে হবে।