অভিমন্যু মুখোপাধ্যায় পরিচালিত শ্রাবন্তী ও সোহম অভিনীত ‘গুগলি’ আদ্যন্ত মূলধারার বাণিজ্যিক একটি ছবি। তবে মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি বললেই, যে যে ছবি ফুটে ওঠে, ‘গুগলি’ও আদতে তার সঙ্গে মিলে যায়। এ ছবি প্রেমের। এ ছবি আরও কিছু বিষয়ের। কিন্তু কোনও বিষয়ই সিরিয়াস ভাবে বলা না। রোজকার ব্যস্ততার ভিড়ের থেকে বেরিয়ে এই ছবি যেন একমুঠো বাতাস। আর সেখানেই এ ছবি কেবলই বিনোদনের। তার বেশি যেন-বা আর কিছুই বলার নেই।
দু’টি ছেলেমেয়ের কথা বলার সমস্যা নিয়ে এ ছবি। তাঁদের সম্পর্ক হয় এবং বিয়ে হয়। কিন্তু সন্তানের একই কথা বলার সমস্যা হতে পারে, তাই সন্তান জন্ম প্রসঙ্গে পিছু হটেন মেয়েটি। সেখান থেকে সম্পর্কে দূরত্ব। পরে সন্তানের সিদ্ধান্তে রাজি হওয়ায়, ফের এক হয়ে যাওয়া দু’জনের। মোটামুটি এই চেনা ছকেই ঘুরে বেড়ায় এ ছবি। এক চেনা সমস্যার অজানা রুপ দেখানো হয়েছে এই ছবিতে।
কথা বলার এই সমস্যা তো নতুন কিছু নয়। সে বিষয় নিয়েই যখন ছবি হচ্ছে, তখন কি আরও সহজ হওয়া যেত না? সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে বারবার হাসি দেখানোয় কোথাও কষ্ট হয়। যে মানু্ষেরা কথা বলার এ সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা কি খুব স্বেচ্ছায় মজা করবেন বলে এ ভাবে কথা বলেন? এই দিকে নজর দেওয়া উচিৎ ছিল।
বাঙালি বাড়ির বিয়ে নিয়ে অনেক সংলাপ শুনতে হল। যেগুলি যথেষ্ট সমস্যার।বিয়ে বিষয়টিও এ ছবির মতোই যথেষ্ট অনাধুনিক ভাবে দেখানো হয়েছে। যে সমাজে একসঙ্গে থাকার এত রকম সুযোগ, সেখানে, বিয়ে মানেই সন্তান এ ছকটা এ ছবির আখ্যানের মতোই অত্যন্ত প্রাচীন বলে মনে হল।
তবে অভিনয় ও সঙ্গীতেও নতুন কিছুই নেই। সোহমের অভিনয় যথেষ্ট অর্থহীন লাগে। সন্তান হারানোর কান্না তাঁর যত চড়া, বিয়ের জন্য আনন্দ ততই অতিরিক্ত মজার। স্বাভাবিক কোনও অনুভূতিই নেই তাঁর। শ্রাবন্তীকে তুলনায় পরিণত লাগে। সন্তান হারানোর পর তাঁর চুপ করে যাওয়া যথেষ্ট ভাল। কিন্তু তোতলানোর সময় দু’জনকেই আরোপিত মনে হয়। একঘেয়ে লাগে। পার্শ্বচরিত্ররদের উচ্চারণ ও অভিনয় দেখে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না, তাঁরা আধুনিক যুগের লোক।
ছবির সময়সীমা আরও ছোট হতে পারত। কেন টেনে টেনে এত দীর্ঘ করা হল, তার কোনও কারণ নেই। প্রায় অবিশ্বাস্য সেটে, প্রাচীন সব সংলাপ দেখতে দেখতে ক্লান্ত লাগছিল। কেন বা এ সব চটুল অবাস্তব প্রেমের ছবি ভাবলেন তিনি? উত্তর নেই।