গোয়েন্দাদের তরফে আগাম সতর্কবার্তা ছিলই। কিন্তু বৃহস্পতিবার অবন্তীপোরার ঘটনার দিন সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেই সিআরপিএফকে সবুজ সংকেত দিয়েছিল রোড ওপেনিং পার্টি(আরওপি)। তবে কি সেনাবাহিনী, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ ও আধাসেনার জওয়ানদের নিয়ে গঠিত আরওপির গাফিলতিতেই অমন জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটেছে? নিরাপত্তার গাফিলতি না থাকলে এমন ঘটনা মোটেও ঘটতে পারে না। এবার এমনই দাবি করলেন, দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংস)-এর প্রাক্তন প্রধান বিক্রম সুদ। ইতিমধ্যেই তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
গত বৃহস্পতিবার জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভয়াবহ আত্মঘাতী জঙ্গী হামলায় ৪৪ জন সেনা শহিদ হওয়ার পরে সংবাদ মাধ্যমের কাছে বিক্রম সুদ দাবি করেন, ‘কোথাও কোনও নিরাপত্তার গাফিলতি না থাকলে, এত বড় কোনও ঘটনা মোটেই ঘটতে পারে না।’ হায়দ্রাবাদে একটি অনুষ্ঠানে রবিবার তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি না ঠিক কোথায় কী ভুল হয়েছে। তবে এটুকু বলতে পারি, কোনও ধরনের নিরাপত্তার ঘাটতি না থাকলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না।’
প্রাক্তন ‘র’ কর্তার মতে, ‘ওই হামলার সঙ্গে এক জন নয়, একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিল– এটা মেনে নিতেই হবে। ওই একাধিক ব্যক্তির মধ্যে কেউ বিস্ফোরক বানানোর কাঁচামালগুলো কিনে এনেছে, কেউ আবার সেগুলি দিয়ে বিস্ফোরক তৈরি করেছে। সেগুলোকে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেউ আবার গাড়ি নিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে তাদের কেউ সিআরপিএফের কনভয় যাওয়ার পুঙ্খানুপুঙ্খ খবরাখবরও রেখেছে।’
এটা একটা বড় পরিকল্পনা ও তার নিখুঁত প্রয়োগের ব্যাপার বলে মনে করেন তিনি। খুব সহজে হঠাৎ চাইলেই এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলা যায় না। ফলে আচমকা, কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই এমন হামলার মুখে কী করে পড়লেন অত জন সেনা!– প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। প্রাক্তন ‘র’ কর্তা আরও জানান, বিশাল সংখ্যক সেনাকে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যেতে সাধারণত বিমানের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সে দিন আড়াই হাজারেরও বেশি সেনাকে স্থানান্তরিত করার জন্য ৭৮টি বাস ব্যবহার করা হয়েছিল। একসঙ্গে অতগুলি সেনাবাস একই রাস্তায় চলার কথা নয়। তার পরেও তেমনটাই হল।
এই ঘটনার পরেই পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে বিক্রমকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এটা কোনও বক্সিং ম্যাচ নয়। আপনিও প্রধানমন্ত্রীর মতো মন্তব্য করতেই পারেন। সেটা নির্ভর করছে আপনার অবস্থান এবং সময়ের উপর। কিন্তু আজ বা কালকেই কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলা যেতে পারে, তেমন কোনও সুযোগ ও সম্ভাবনা সব সময়ে না-ও থাকতে পারে।’
অন্যদিকে, সোমবার ভোরেও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ফের জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবারের আত্মঘাতী হামলার ৬ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে এই হামলা হয়েছে। সেনা ও জঙ্গী সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১ মেজর-সহ চার জন জওয়ান। গুরুতর আহত আরও কয়েকজন। প্রায় একই এলাকায় জঙ্গীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জওয়ানদের নিহত হওয়ার ঘটনায় আবারও প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা। এক্ষেত্রে প্রাক্তন ‘র’ কর্তার দাবি যে খুব ভুল কিছু নয়, এদিনের ঘটনা সে দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।