পুলওয়ামার বিস্ফোরণ এক লহমায় বদলে দিয়েছে গোটা জীবন। পাঁচ বছরের বাচ্ছা মেয়েকে কি করে বড় করে তুলবেন সেটাই এখন সবথেকে বড় চিন্তা শহীদ বাবলু সাঁতরার স্ত্রী মিতার। কিন্তু এই মারাত্মক শোকেও অত্যন্ত দৃঢ় তিনি। স্বামীর কফিন আসার আগেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, যুদ্ধ চান না তিনি। তাতে আরও অনেক মায়ের কোল খালি হয়ে যাবে। তিনদিন পরেও নিজের বক্তব্যে অনড় তিনি।
যুদ্ধের বিপক্ষেই কথা বললেন সদ্য স্বামীহারা মিতা। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধে অনেক মায়ের কোল খালি হয়। সব বড় যুদ্ধের পরে সবাই তো শান্তির জন্য চেষ্টা করেন। সেটা তো যুদ্ধের আগেও করা যায়। সে কথা ভেবেই আমি শান্তির কথা বলেছি।’’ শোকে পাথর হয়ে থাকলেও নিজের মত জানাতে পিছপা হননি তিনি।
হাওড়া থেকে ভাই এবং স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন একটি চটকলের আধিকারিক মহেশপ্রসাদ আগরওয়াল। বাবলুর ছবিতে মালা দেওয়ার পরে মুষ্টিবদ্ধ ডান হাত উপরে তুলে বললেন, ‘‘প্রতিশোধ চাই। এখনই একটা যুদ্ধ হওয়া দরকার।’’ বাবলুর প্রতিবেশী গোবিন্দ প্রামাণিকের গলাতেও প্রতিশোধের সুর, ‘‘বড় না হলেও শত্রুকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার মতো ছোট যুদ্ধ দরকার”। অনেকেই চাইছেন যুদ্ধই হোক, কিন্তু মিতা এবং তাঁর মত আরও অনেকেই মনে করেছেন যুদ্ধ হলে এভাবেই শোক নেমে আসবে আরও অগণিত পরিবারে।
অতিথিদের ওই দাবির কথা শুনেও অবশ্য হেলদোল নেই মিতার। তিন দিন ধরে তিনি অপরিচিতদের সঙ্গে দেখাই করেননি। শনিবার সন্ধ্যায় আসেন স্থানীয় ক্লাবের মাঠে স্বামীকে অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে। তার মধ্যেই জানিয়েছিলেন তাঁর যুদ্ধবিরোধী অবস্থানের কথা। কিন্তু কোন পথে জঙ্গি নিকেশ সম্ভব সে ব্যাপারে এ দিন তিনি আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
গতকাল দুপুরে উলুবেড়িয়া পুরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর অসিরঞ্জন অধিকারীকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়িতে আসেন সিআরপিএফ-এর এক অফিসার। তিনি জানান, অকালমৃত্যুজনিত সুযোগ-সুবিধাগুলি বাবলুর পরিবার যাতে দ্রুত পায়, সে বিষয়েই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে সই করানোর জন্য তিনি এসেছেন। অসিরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘পুরসভা সব রকম ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করছে।’’ বিকেলে বাবলুর স্মৃতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে মৌনী-মিছিল হয় এলাকায়। নেতৃত্বে ছিলেন উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক পুলক রায়।
যদিও চারপাশে যে ভাবে যুদ্ধের জিগির উঠছে, তাতে তাঁর অবস্থান সমালোচনার মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকলেও মিতা অকুতোভয়। তাঁর কথায়, ‘‘সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে আমার। যাঁরা আমার স্বামীর জন্য ভালবাসা-শ্রদ্ধা জানাবেন, তাঁরাই যদি এর পরে আমার সমালোচনা করেন, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যের কিছু নেই। আমার বক্তব্য আমি জানিয়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি সরকারের উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি। সরকারি সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই সকলের পক্ষে ইতিবাচক হবে।’’