বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় হওয়া জঙ্গী হামলার পর থেকেই দু’ভাগে বিভক্ত সোশ্যাল মিডিয়া। একদল চাইছে যুদ্ধ। আর অন্যদল চাইছে হিংসা নয় শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে। অন্য অনেকের মতোই শান্তির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তিনি। সেনাকর্মীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট ছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফেসবুকে। তার জেরে বারাসতের এক মহিলাকে গণধর্ষণ ও খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। দেশপ্রেমকে কেন্দ্র করে অসহিষ্ণুতার এমন একাধিক ঘটনা রাজ্য জুড়ে ঘটে গেল সপ্তাহান্তে।
রবিবার হামলা হয় বনগাঁর এক স্কুলশিক্ষকের বাড়িতে। আবার কোচবিহারে এক যুবককে রাস্তায় টেনে এনে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়। ফেসবুকে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজের ছাত্র অর্পণ রক্ষিতকে গ্রেফতার করে হাবড়া থানা। রোষের শিকার শিলিগুড়ির অরবিন্দনগরের এক তরুণী এবং কোচবিহারের খাগড়াবাড়ির দুই যুবক ও তাঁদের পরিবারের লোকজনও।
ধর্ষণ ও খুনের হুমকির মুখে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন বারাসতের মহিলা। তবে বনগাঁর শিক্ষককে সপরিবার বাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে। তিনি জানান, রবিবার সকালে ৪০-৫০ জনের একটি দল তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। চড়থাপ্পড় মারা হয় তাঁকে। ভাঙচুর করা হয় বাড়ির গেট। তাঁকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করিয়ে ভিডিয়োয় তা তুলে রাখা হয়। যদিও তার আগেই ফেসবুক থেকে ওই ‘পোস্ট’ সরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। হামলার পরে আর বনগাঁর বাড়িতে থাকার সাহস পাননি তিনি।
পুলওয়ামায় হামলার প্রতিবাদে শনিবার বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়েছিল হাবড়ার অর্পণ। অভিযোগ, বাড়ি ফিরে তার একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে শুরু হয় বিতর্ক। পোস্টটি সরানোর দাবিতে রবিবার সন্ধ্যায় অর্পণের বাড়ির সামনে জড়ো হন বেশ কয়েক জন। তার বাবা-মাও ওই পোস্টটি মুছে দেওয়ার জন্য ছেলেকে বলেন। কিন্তু অর্পণ রাজি হয়নি। উত্তেজনা বাড়লে পুলিশ ছাত্রটিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
হাবড়া থানার আইসি গৌতম মিত্র জানান, বিতর্কিত পোস্ট করে উত্তেজনা ছড়ানোর দায়ে অর্পণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছাত্রটির কিছু বন্ধু থানার সামনে জড়ো হয়ে তার মুক্তির দাবি জানাতে থাকে। শাস্তির পাল্টা দাবিতে স্থানীয়রা থানার সামনে জড়ো হন। রাত পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।
শিলিগুড়ির অরবিন্দনগরে এক কলেজছাত্রীর পোস্ট নিয়ে গোলমাল হয়। তাঁর বাড়ির সামনে প্রায় এক হাজার লোক জড়ো হয়ে ঢিল ছুড়তে থাকে। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি অচিন্ত্য গুপ্তের নেতৃত্ব বড় বাহিনী গিয়ে তরুণী এবং তাঁর মা ও ভাইকে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। কোচবিহারের এক পড়ুয়া কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তিনি ফেসবুকে একটি বক্তব্য পোস্ট করে পরে মুছে দেন। কিন্তু তত ক্ষণে অনেকেই তা দেখে ফেলেছেন।
‘দেশবিরোধী’ কথার অভিযোগ তুলে রবিবার ওই যুবকের বাড়িতে চড়াও হয় জনতা। দেখা যায়, ওই যুবক বাড়িতে নেই। তখন তাঁর বাবাকে প্রকাশ্যে হেনস্থা করা হয়েছে। তাঁকে বলা হয়, ‘আপনার ছেলেকে এসে ‘ভারতমাতার জয়’ এবং ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর জয়’ বলতে হবে।’ সর্বজিৎ সাহা নামে একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে গোটা ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ দেখানো হয়।
ওই এলাকাতেই আর এক যুবকের হোয়াটসঅ্যাপে করা একই ধরনের মন্তব্য নিয়ে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়েছে। তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে রাস্তায় নিয়ে আসা হয়। ওই দুই যুবকের পরিবারই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে বলে রবিবার রাতে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে।
আবার খাস কলকাতারই এক সমাজকর্মী তাঁর ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা দিতে চাওয়ায় তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যা দেয় নেটিজেনদের একাংশ। এমনকি তাঁর গত বছরের একটি ‘পোস্ট’-এর কারণে শুক্রবার ও শনিবার তাঁর ওপর চড়াও হয় জনতা। তিনি স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন, বলেই খবর।