নামেই ‘নমামি গঙ্গে’। এই প্রকল্প নিয়ে বিস্তর ঢাকঢোল পেটানো হলেও, বাস্তবে কিন্তু মোদী জমানায় গঙ্গায় দূষণ বেড়েছে বই কমেনি। এই নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে খোদ কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদই।
সদ্যই গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার এই নমামি গঙ্গে প্রকল্পে টাকা ঢালতে নিজের উপহার নিলাম করেছেন মোদী। কিন্তু কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট বলছে, ২০১৪-র তুলনায় ২০১৮-য় দূষণ বেড়েছে গঙ্গায়। উত্তরাখণ্ডে এই চার বছরে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, বাংলার গঙ্গায় দূষণের মাত্রা একই। ফলে প্রশ্ন উঠছে, গঙ্গাকে দূষণ-মুক্ত করার প্রকল্প ব্যর্থ হওয়াতেই কি এখন ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের নামে নিজের উপহার নিলাম করে মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছেন মোদী?
গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করবেনই— প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসে এই শপথ নিয়েছিলেন মোদী। গঙ্গা দূষণমুক্তির পুরনো প্রকল্পে ধর্মীয় আবেগ জুড়ে নতুন নাম হয় ‘নমামি গঙ্গে’। জলসম্পদ মন্ত্রকের সঙ্গে গঙ্গা পুনরুজ্জীবন নামের দফতরও যোগ করেন তিনি। মোট বাজেট ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দে এখনও পর্যন্ত ৬,১০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তবে তাও দূষণ কমেনি।
উল্লেখ্য, গত লোকসভা ভোটে বারাণসীতে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে মোদী বলেছিলেন, তিনি মা গঙ্গার ডাকে এসেছেন। কিন্তু পর্ষদের পরীক্ষায় গঙ্গায় সব থেকে বেশি দূষণের মাত্রা মিলেছে মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৮-র জুনে এই রিপোর্ট তৈরি হলেও এত দিন তা ধামাচাপা ছিল। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা প্রকাশ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেল বলেন, ‘বিজেপি সরকার নিজের ব্যর্থতা স্বীকারের বদলে রিপোর্ট লুকোনোর চেষ্টা করেছিল। এ বার সরকার কোথায় লুকোবে?’ একইসঙ্গে সুর চড়ান বাকিরাও। তবে বিরোধীদের আক্রমণ শুরু হতেই পর্ষদের ওয়েবসাইট থেকে আশ্চর্যজনকভাবে উধাও সেই রিপোর্ট। পাশাপাশি মুখে কুলুপ এঁটেছে সরকার তথা পর্ষদও।
এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য রাজীব গৌড়া বলেন, ‘কুম্ভমেলায় লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী প্রয়াগে পুণ্যস্নান করছেন। আর মোদী সরকার দূষণ নিয়ে রিপোর্ট লুকোতে ব্যস্ত। কারণ ইলাহাবাদের জলের মান যে খারাপ হয়েছে, তা সবাই জেনে যাবেন। গঙ্গার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দায়বদ্ধতা আসলে আরও একটি জুমলা, নেহাতই কথার কথা।’
রিপোর্ট উধাও হওয়ার আগেই অবশ্য সমস্ত তথ্য চোখে পড়ে গিয়েছিল সকলের। তাতে দেখা গিয়েছে, ২০১৪-র তুলনায় ২০১৮-য় গঙ্গায় দূষণের মাত্রা অনেকটাই বেড়েছে। উত্তরাখণ্ডে দূষণ বেড়েছে। এবং উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গায় দূষণের মাত্রা রয়েছে আগের মতোই। ছিটেফোঁটাও কমেনি। দু’দফার পরীক্ষায় গঙ্গায় দূষণের মাত্রা সব থেকে বেশি প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্র বারাণসীতেই। আর সব থেকে যা তাৎপর্যপূর্ণ, তা হল ২,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গার মাত্র একটি স্থানেই জলই পানের যোগ্য।
বিরোধীদের অভিযোগ, এমন সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লোকাতেই ওয়েবসাইট থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্ট। যাতে লোকসভা ভোটের মুখে আর নতুন করে বিড়ম্বনায় না পড়তে হয় মোদী সরকারকে।