নাথুরাম গডসের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল মহাত্মা গান্ধীর। আর তাই বিজেপি-আরএসএসের মুখে গান্ধীর জীবন ও আদর্শ নিয়ে কোনও রকম ব্যাখ্যা শুনতে পাওয়াটাই হাস্যকর। কিন্তু তারপরেও মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছেন, কংগ্রেস কথায় কথায় এখন মহাত্মা গান্ধীর কথা বলে, কিন্তু গান্ধীকে গোটা দুনিয়ার কাছে তুলে ধরেনি। গান্ধীকে বিশ্ব জেনেছে রিচার্ড অ্যাটেনবরোর ‘গান্ধী’ সিনেমাটি দেখার পর। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিংয়ের মুখেও পড়তে হচ্ছে মোদীকে। সরব বিরোধীরাও। যেমন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন অর্থ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, বাকি বিশ্ব যদি নাই চিনত তাহলে আইনস্টাইন গান্ধীর কথা জানলেন কী করে?
এদিকে, মোদী যে একেবারেই অযৌক্তিক দাবি করেছেম, তা বোঝাতে তৎপর হয়েছেন নেটিজেনরা। গান্ধী যে তাঁর কাজের মধ্য দিয়েই গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত তুলে ধরছেন তাঁরা। যেমন জগৎ বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন। তাঁরা কোনও ব্যক্তি বিশেষকে নিয়ে কভার স্টোরি করলে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত রিসার্চ করে এবং অন্যতম মাপকাঠি হল নির্দিষ্ট কোনও ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির অবদান। দেখা যাচ্ছে, জনপ্রিয় সেই মার্কিন পত্রিকা তাদের ১৯৩১ সালের ৫ জানুয়ারি সংখ্যায় গান্ধীকে নিয়ে কভার স্টোরি করেছিল। শিরোনাম ছিল, ‘সেন্ট গান্ধী—ম্যান অফ দ্য ইয়ার ১৯৩০’। টাইম পত্রিকা এর আগে কোনও ভারতীয় সম্পর্কে সেন্ট বা সাধু শব্দটি ব্যবহার করেনি। বলাই বাহুল্য লেখার বিষয় ছিল ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে গান্ধীর সংগ্রাম এবং একই সঙ্গে তাঁর সহজ সাধারণ জীবনযাপন।
১৯৩০-এর ১২ মার্চ গান্ধী লবন সত্যাগ্রহ শুরু করেন। সেই বছরের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ডান্ডি অভিযান করেন। ২৪ দিনের পদযাত্রার ধাক্কায় ভারতীয়দের লবন তৈরির অধিকার দিতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ সরকার। ওই দশক জুড়ে গান্ধীর আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারকে পদে পদে বিপাকে ফেলে। এরপর ১৯৩০-এর ৩১ মার্চ এবং ১৯৪৭-এর ৩০ জুন সংখ্যাতেও টাইমের প্রচ্ছদ স্টোরির বিষয় ছিল মহাত্মা গান্ধী। সেসময় গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত আর একটি ম্যাগাজিন ছিল ‘লাইফ’। সেটির ১৯৪৬ সালের ২৫ মার্চের সংখ্যার কভার স্টোরি বা মূল বিষয় ছিল গান্ধী। টাইম-এর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাগাজিন নিউজ উইক-এর একাধিক সংখ্যাতেও ছাপা হয়েছে গান্ধীর কথা। এমনকী ১৯৪৮-এর ৩০ জানুয়ারি তাঁকে হত্যার খবর পৃথিবীর সমস্ত প্রথমসারির সংবাদপত্র গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছিল।