প্রবল অস্বস্তিতে পড়ল মণিপুরের ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার। পাশাপাশি মুখ পুড়ল কেন্দ্রের মোদী সরকারেরও। বহুদিন ধরেই জাতিদাঙ্গার আগুনে জ্বলছে উত্তর-পূর্বের বিজেপিশাসিত এই রাজ্য। এবার মণিপুরের হিংসায় কড়া রিপোর্ট দিল রাষ্ট্রসংঘের বিশেষজ্ঞ কমিটি। স্পষ্ট জানাল, “গুরুতর মানবাধিকার লংঘন হয়েছে মণিপুরে। মানবাধিকারকে ধ্বংস করা হয়েছে মণিপুরে।” রিপোর্টে মণিপুরে যৌন নির্যাতন-যৌন হিংসার ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড ও বাড়িঘর ধ্বংসের কথাও উঠেছে সেই রিপোর্টে। যদিও রাষ্ট্রসংঘের বিশেষজ্ঞ কমিটির এই রিপোর্টকে খারিজ করেছে মোদী সরকার। ভারত সরকারের বক্তব্য, রাষ্ট্রসংঘের বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট ‘অযৌক্তিক, অনুমানমূলক ও বিভ্রান্তিমূলক।’ রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনে ভারতের দাবি, উত্তর-পূর্ব রাজ্যের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ। কিন্তু বাস্তব চিত্র পুরোই বিপরীত। জাতিগত হিংসায় বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট রাজ্য মণিপুর। রাজ্যের দুই বৃহত্তম গোষ্ঠী, সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতি এবং সংখ্যালঘু কুকি-র মধ্যে গৃহযুদ্ধের কারণে পরিস্থিতি সঙ্গীন হয়ে ওঠে উত্তর-পূর্বের রাজ্যটিতে। নৃশংস খুন থেকে একের পর এক মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসার বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এরমধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল মেইতেই পুরুষদের হাতে দুই কুকি মহিলাকে ধর্ষণের পর নগ্ন করে সকলের সামনে প্যারেড করানো। মে মাসে এই আক্রমণের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার একটি মর্মান্তিক ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় ২ মাস পর। তারপর সেই ঘটনায় ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। মে মাসে শুরু হওয়া হিংসার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪০০ জনেরও বেশি।
উল্লেখ্য, জনৈক স্বাধীনতা সংগ্রামীর আশি বছরের বৃদ্ধা স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, এক ১৮ বছরের তরুণী অভিযোগ করেন, তাঁকে গণধর্ষণ করেছে কালো পোশাক পরিহিত অস্ত্রধারী ৪ যুবক। ওই তরুণী পুলিশকে জানান, তাঁকে অপহরণ করে মহিলাদের একটি দল। তারপর তাঁকে তুলে দেওয়া হয় অস্ত্রধারী ওই ৪ যুবকের হাতে। ঘরে ঢুকে ২ বোনকে গণঘর্ষণের পর খুনের অভিযোগও সামনে এসেছে। খুনের পর মুণ্ডু কেটে বাঁশের বেড়ার মাথায় টাঙিয়ে রাখার মত বীভৎসতাও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। মণিপুর হিংসায় কড়া অবস্থান নিয়েছে সুপ্রিম কোর্টও। মণিপুর পুলিশকে উদ্দেশ করে কড়া তোপ দাগে শীর্ষ আদালত। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রবল ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় মণিপুর পুলিশকে। মণিপুরে তদন্তে বরাবরই উদাসীন মনোভাব দেখিয়েছে পুলিশ। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি বিপর্যস্ত। এমনই জানায় প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। তলব করা হয় মণিপুর পুলিশের ডিজিকেও। এরপরই মণিপুরে হিংসার ঘটনায় তদন্তে বেনজির নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। ৩ প্রাক্তন মহিলা বিচারপতিকে নিয়ে কমিটি গঠন করে দেয় আদালত। একইসঙ্গে একজন ডিআইজি পদমর্যাদার অফিসারের তত্ত্বাবধানে ৪২টি স্পেশ্যাল ইনভেস্টেগেশন টিম তথা ‘সিট’কে মণিপুরে পাঠানোর নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।