একেবারেই মানুষের তৈরি নয়। মাল নদীর হড়পা বাস এসেছিল প্রাকৃতিক কারণেই। প্রাথমিকভাবে স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণ করে এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ৫ই অক্টোবর, বিজয়া দশমীর রাতে মাল নদীতে হড়পা বান আসে। জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টর শিখেন্দ্রকিশোর দে বলছেন, ওইদিনের ঘটনাস্থল থেকে ১৫ কিলোমিটার উপরের দিকে, ভাঙনের ভগ্নাবশেষ জমে মাল নদীতে ডেবরিস ব্লকেজ তৈরি হয়েছিল। যা কার্যত একটি বাঁধের রূপ নিয়েছিল। সেই ব্লকেজের একদিকে প্রচুর পরিমাণে জল জমেছিল। জমা জলের জেরে নুড়ি, পাথরের ব্লকেজ ভেঙে বিপুল জলস্রোত নেমে এসে এমন বিপর্যয় ঘটাতে পারে। অধুনা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক শিখেন্দ্রবাবুর কথায়, দুর্ঘটনার কয়েকদিন আগে ১ অক্টোবরের উপগ্রহ চিত্রে ডেবরিস ব্লকেজটি চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ব্লকেজটি কী অবস্থায় রয়েছে, তা যাচাই করতে বিশ্লেষণ করতে হবে স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া পরবর্তী সময়ের ছবি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইউরোপিয়ান স্পেস কমিশনের পাঠানো ‘সেন্টিনেল-২’ উপগ্রহের পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আগামী ১৫-১৬ই অক্টোবর নাগাদ আবার ওই জায়গার ছবি নেবে স্যাটেলাইটটি। তখন সেখানকার আকাশ মেঘমুক্ত থাকলেই স্পষ্ট ছবি পাওয়া যাবে। গোটা বিশ্লেষণের প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিমোট সেন্সিং বিভাগের গবেষক বিজয়কৃষ্ণ গায়েন জানান, ১০ অক্টোবর ওই জায়গার উপগ্রহ চিত্র পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আকাশে মেঘ থাকায় স্পষ্টভাবে কিছুই বোঝা যায়নি। সেই কারণেই পরবর্তী ছবির জন্য তারা অপেক্ষা করছেন। বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে রাজ্য সেচদফতর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সঠিক কারণ নিয়ে এখনও নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হলে, পাহাড়ি নদীতে হড়পা বান আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। আবহাওয়া দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই সময় মাল নদীতে বান আসার মতো প্রচুর বৃষ্টিপাত নদী অববাহিকা এলাকায় হয়নি। হঠাৎ করেই নদীতে এত জল কোথা এল, তার উত্তর খোঁজা শুরু হয়েছে। স্যাটেলাইট ছবি থেকে স্পষ্ট হয়েছে নদীতে ব্লকেজের একদিকে প্রচুর জল ছিল, স্বভাবতই অন্যদিকটি প্রায় জলশূন্য ছিল। প্রাকৃতিক কারণেই এই ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে।