বিজেপি এবং তৃণমূলকে ঠেকাতে জোট করা নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের সম্মেলন মঞ্চে বেআব্রু হয়ে গেল বাম ঐক্য। ফের প্রকাশ্যে চলে এল মতপার্থক্য।
বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের অষ্টাদশ রাষ্ট্রীয় সম্মেলনের মঞ্চে আয়োজিত আলোচনাসভায় সিপিএম-সিপিআইয়ের থেকে উল্টো সুরে গাইল আরএসপি, এসইউসি, সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর মতো অপেক্ষাকৃত ছোট বাম দলগুলি। বিজেপিকে ঠেকাতে বা রাজ্য থেকে তৃণমূলকে হটানোর ইস্যুতে সম্মেলনের আয়োজক ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফেও কেবল বাম দলগুলির জোটের উপরই জোর দেওয়া হয়েছে আগেই। ফলে আগামী লোকসভা ভোটে বাংলায় শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের হাত ধরে লড়াই করার পথ কতটা সুগম হবে, তা নিয়ে জোটপন্থী বাম দলগুলির নেতৃত্বের মধ্যে ধন্দ থেকেই গিয়েছে যথারীতি।
আলোচনাসভায় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সরাসরি রাহুল গান্ধীর দলের নাম না করলেও এ রাজ্যের প্রশ্নে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস সহ যাবতীয় ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির সম্মেলনকেই তাঁর দল এই মুহূর্তে একমাত্র রণকৌশল হিসেবে মনে করে। কেন্দ্রে বিকল্প সরকার তৈরির ক্ষেত্রে তাঁদের এই রণনীতি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন বলেও ইয়েচুরি জানান।
সিপিএম-সিপিআইয়ের মতো এভাবে জোটের পথে যাওয়ার সুর এদিন শোনাননি বাকি বাম দলগুলির নেতারা। আরএসপি’র নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী সরাসরি কংগ্রেসের নাম করে বলেন, ‘বিজেপিকে ঠেকাতে রাহুল গান্ধীর দলের সঙ্গে বামেরা কিছু রাজ্যে গাঁটছড়া বাঁধবে কি না, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে আর্থিক নীতি সহ নানা ব্যাপারে অজস্র মিল রয়েছে। উভয় দলই পুঁজিপতিদের দালাল বলেই দেশের শ্রমজীবী মানুষের কাছে পরিচিত। তাছাড়া বাংলায়, বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গত বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে জোট করলেও কংগ্রেস আমাদের পিছন থেকে কীভাবে ছুরি মেরেছিল, সে কথাও মাথায় রাখতে হবে। তবে পাঁচ রাজ্যের ভোটের পর সারা দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাকেও পুরোপুরি অস্বীকার করা যায় না’।
এসইউসি’র পলিটব্যুরো সদস্য সৌমেন বসু অবশ্য চাঁচাছোলা ভাষায় বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয় দলের সঙ্গে কোনওরকম নির্বাচনী বা রাজনৈতিক সংস্রব রাখার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। শুধুমাত্র নির্বাচনসর্বস্ব রাজনীতি করার বিরুদ্ধেও সরব হন তিনি।