একুশের বিধানসভা নির্বাচনের বহু আগে বাঁকুড়ার চতুর্ডিহি গ্রামের জনমজুর বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে সদলবলে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ভোজের পর শাহ কথা দিয়েছিলেন জটিল রোগে ভোগা বিভীষণের মেয়ের চিকিৎসা করাবেন দিল্লীর এমস হাসপাতালে। কিন্তু কথা দেওয়াই সার। সেই প্রতিশ্রুতির এক বছর পেরিয়ে গেলেও মেয়েকে দিল্লীর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। তাতেই ক্ষুব্ধ বিভীষণ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর বাংলা সফরে আসা অমিত ছাড়াও বিভীষণের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ থেকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ আরও অনেকেই। বিভীষণের বাড়ির দেওয়ালে বিজেপির নির্বাচনী প্রতীক পদ্মফুলের পাশে ‘অমিতজি স্বাগতম’ লেখা এখনও জ্বলজ্বল করছে। অমিতকে কাছে পেয়ে খাওয়ার ফাঁকেই অসুস্থ মেয়ে রচনার কথা বলেছিলেন বিভীষণ। চিকিৎসার খরচ চালানো নিয়ে নিজের অসহায়তার কথাও জানিয়েছিলেন। শাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ছেলেবেলা থেকে ডায়াবেটিসে ভোগা মেয়ের দিল্লীর এইমসে চিকিৎসা হবে। কিন্তু এক বছর পার হলেও কথা রাখা হয়নি বলে অভিযোগ বিভীষণের। তিনি বলেন, ‘সবাই বলেছিল, আমার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার ভার নেবে। দিল্লীর এমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। প্রথম প্রথম ওষুধ, ইঞ্জেকশনের ব্যবস্থাও করেছিল। কিন্তু এখন কেউ খোঁজটুকুও নেয় না। কেউ কথা রাখেনি। আমরা স্বামী-স্ত্রী অন্যের জমিতে দিনমজুরি করি। যা উপার্জন করি তা দিয়েই মেয়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়।’
জানা গিয়েছে, বিভীষণের মেয়ের চিকিৎসার জন্য অমিত দলীয় নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। শাহ চলে যাওয়ার পর বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ তথা এখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার-সহ অন্য বিজেপি নেতারা গিয়েছিলেন বিভীষণের মেয়ের খোঁজ নিতে। রচনার চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে সুগারের পরিমাণ জানতে রক্ত পরীক্ষা এবং ওষুধের ব্যবস্থাও করেন তিনি এবং পাশে থাকার আশ্বাসও দেন। সেই আশ্বাসে বিভীষণ এবং তাঁর স্ত্রী মণিকা ভেবেছিলেন, উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে তাঁর মেয়ে। কিন্তু তার পরে মাসের পর মাস পার হয়েছে। রচনার দিল্লী যাওয়া হয়নি। এতেই মন ভেঙেছে হাঁসদা দম্পতির। মেয়ের চিকিৎসার স্বপ্নে চিড় ধরতেই ক্ষুব্ধ বিভীষণ বলছেন, ‘আমার মেয়েকে রোজ চার বার ইনসুলিন দিতে হয়। সঙ্গে কয়েকটি ওষুধও খেতে হয়। সব মিলিয়ে মাসে পাঁচ হাজারেরও বেশি টাকা খরচ। প্রথমে অনেকে সাহায্য করেছিলেন। এখন আর কেউ খোঁজটুকু রাখেন না।’