যোধপুর পার্কে একচিলতে রোদ্দুর মাখা ছোট্ট এক ক্যাফে৷ নাম ক্যাফে পসিটিভ। লেখাটা পুরো পড়ার আগেই জানিয়ে রাখি, পসিটিভ কারণ এই ক্যাফেটা ১০জন এইচআইভি পসিটিভ ছেলেমেয়ে চালায়। এশিয়ার মধ্যে প্রথম এরকম কোন ক্যাফে। এবার আপনি যদি মনে করেন তাদের সমন্ধে পড়লে ও এইচআইভি আক্রান্ত হতে পারেন, আপনার জন্য সহানুভূতি থাকল।
মিষ্টি করে আর পাঁচটা ক্যাফের মতোই সাজানো এই ক্যাফে তবে এতে নাকি আদর আছে বেশী আর থাকার মধ্যে আছে দিদার কাছে শোনা সেই সব রুপকথার লড়াই জেতার গল্প৷ যোধপুর মার্কেটের পাশেই তবু খুঁজে খুঁজে যেতে হবে। আশাবাদী সবকিছু পেতেই যেমন অনেক খোঁজার পরে ক্লান্ত পথিকবরেদের দাঁড়াতে হয়। এখানে বসাও যায়। এখানে কোন অন্ধকার নেই।
থাকার মধ্যে ফ্ল্যুরিজ এর আভিজাত্য-ও নেই। গ্রেট ইস্টার্ন এ কেক মিক্সিং এর রোমাঞ্চ-ও নেই। তবে আছে হাতে গরম এক কাপ কফি, চমৎকার কেক, স্যান্ডউইচ, বারুইপুরের ‘অফার’ এনজিওতে তৈরি সব মাফিন। প্লেটের পাশে চাইলে আরো চেয়ার জুরে যেতে পারে। ওখানে গল্প বলার আসর বসতে পারে৷ বা স্রেফ বেঁচে থাকার গান। যা ওরা রোজ শাটার খোলার পর থেকে শুনিয়ে যায় আমাদের।
আমরা যারা, প্রেমিকা হাফসোল খাইয়ে অন্য পুরুষ বিয়ে করলে বাঁচার মানে হারিয়ে ফেলি, আমরা যারা পরিক্ষায় ফেল করলে ভাবি সমাজ কি আমায় মেনে নেবে?
সমাজ ক্যাফে পসিটিভের ১০জন তরুন তরুনীকে ও মেনে নেয়নি৷ কারণ কোন এক সময় তাদের পরিবারের কেউ এইডস এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তাদের নিজেদের এইচআইভি পজিটিভ ধরা পরেছে৷ যা মৃত্যুর ও কারণ হতে পারে। অগত্যা গ্রাম থেকে গুপি গাইন বাঘা বাইনের মতো দূর করে দেওয়া হয়।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে সব গুপি বাঘার গল্পে ভূতের রাজা আসেনা। ভূতের রাজার ও হয়তো এইচআইভি নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। আমাদের যেমন। ভেবে ফেলি এইচআইভি পসিটিভ কেউ ছুঁয়ে দিলেই আমার এইডস অবধারিত।
প্রতিদিন গোটা পৃথিবীতে হাজার হাজার এইচআইভিতে আক্রান্ত ছেলেমেয়ে আত্মহত্যার কথা ভাবে কারণ তারা রোগটাকে কাবুতে আনতে পারলেও সমাজ কে পারেনি৷ তাদের ছায়া দেখা ও পাপ ভেবে ফেলেছে সমাজ। আলাদা অন্ধকারে ফেলে রেখেছে। তাদের মধ্যে থেকেই এক চিলতে রোদ্দুর তুলে আনার গল্প এই ক্যাফেতে আছে। ওটার প্রাইজ ট্যাগ নেই। এখানে দু দন্ড এসে বসলে, বিশ্বজগত নিয়ে আলোচনার মাঝে বা খুব মনখারাপে চাইলে শোনা যায়, দেখা যায় এসব রোদ্দুর। ওসব আশাবাদের গল্প৷
আসুন। এই শীতে এক লহমা উষ্ণতা নিতে। দাম ও খুব আহামরি না। আর ভালো কথা। কাল এইচআইভি দিবস। আসুন না, গরম গরম কফি আর মাফিন খেতে খেতে ওই এইচআইভিটা নিয়ে ও আর একটু বিস্তারিত জানি। আমি জানি আপনার মনে হচ্ছে, কেক এ ওদের বডি ফ্লুয়িড মিশে গেলে বা কফিতে ওদের রক্ত ফোঁটা ভেসে থাকলে আপনার এইডস হওয়ার সুযোগ আছে কিনা।
উত্তরটা না। নেই।
https://www.facebook.com/ekhonkhobor18/videos/2257811924501371/
ভিডিও সূত্র : টাটা প্রবেশ এন্ড ক্যাফে পসিটিভ
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)