উন্নয়নই মূলমন্ত্র তাঁর। গোটা রাজ্যজুড়ে চলা উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ যাতে কোনও ভাবেই ব্যাহত না হয়, তা নিয়ে সদাই ভাবিত তিনি। এবার ডিপিএল বাঁচাতে তৎপর হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, একজনেরও চাকরি খাব না। কারখানা বাঁচাতে অব্যবহৃত জমি বিক্রি করে দিতে হবে। অন্য সংস্থার সঙ্গে সংযোগ করতে হবে। তারপর পুনর্গঠন করা হবে। তা না হলে ডিপিএল বাঁচবে না। আর ভর্তুকি দেওয়া যাবে না।
বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠকে ডিপিএল বাঁচানোর প্রস্তাব দেন বিধায়ক বিশ্বনাথ পারিয়াল। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, দুর্গাপুর প্রজেক্ট লিমিটেডকে বাঁচাতে হলে তার উদ্বৃত্ত বা অব্যবহৃত জমি অবিলম্বে বিক্রি করে দিতে হবে। জামুড়িয়ায় দলীয় জনসভা এবং দুর্গাপুরের প্রশাসনিক বৈঠক, দু’জায়গাতেই তিনি কোনও রাখঢাক না করে বলেন, ‘লোকসানে চলা ডিপিএলকে বাঁচাতে হলে পুনর্গঠনের পাশাপাশি আমাকে কারখানার উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি করতেই হবে।’ একই সঙ্গে তিনি শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আপনাদের আমি কথা দিচ্ছি, পুনর্গঠন হলে কোনও কর্মীর চাকরি যাবে না।’
গতকাল জামুরিয়া ও দুর্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের সিংহভাগ জুড়েই ছিল ডিপিএল প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘ডিপিএল-এর পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ দপ্তরের তিন সংস্থা ডব্লুবিপিডিসিএল, ডাব্লুবিএসইটিসিএল এবং ডব্লুবিএসইডিসিএলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ ওই তিন সংস্থা খতিয়ে দেখছে, কী কী করা দরকার।’
প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে ৮৫৪ একর জমির উপর গড়ে ওঠে দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)। সূত্রের খবর, ডিপিএল-এ স্থায়ী কর্মী আছেন ২৬০০ জন৷ অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ১৫০০ জন৷ ঢালাও জমি ফাঁকা পড়ে আছে। ৩৫০০ কোয়ার্টারের মধ্যে ১৪৬০টি বন্ধ। কেউ সেখানে বসবাস করেন না। রাজ্য জুড়ে ডিপিএল-এর জমির পরিমাণ প্রায় ২১৭৪ একর৷ এর মধ্যে দুর্গাপুরে কারখানা, আবাসন ও ফাঁকা জমি রয়েছে ৮৫১ একর৷ দুর্গাপুর ছাড়াও বর্ধমান, বালি, বেলমুড়ি-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ডিপিএল-এর জমি আছে৷
এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যদি শ্রমিক না বাঁচে। যদি কারখানাই না বাঁচে। তাহলে জমি রেখে কী হবে। তাই সকলে মিলে চেষ্টা করে কারখানা বাঁচান।’ অন্যদিকে, কয়লাখনি ধস প্রবণ এলাকায় পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে নজরদারির জন্য মলয় ঘটককে নির্দেশও দেন তিনি। জেলাশাসকের রিপোর্ট অনুযায়ী ১২০০০ বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। ৪৪ হাজার বাড়ি হবে।
তবে রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, ইসিএল থেকে জমির অনুমোদন মিলছে না। সেই সূত্র ধরে মুখ্যমন্ত্রী এদিনের সভায় বলেন, ‘মানুষের জীবনের দাম আছে। ইসিএলকে বলুন মানুষের জীবনের দাম কি কয়লার চেয়ে কম? মানুষের দাম বেশি না কয়লার দাম? ধসে যখন লোক মরে যাবে তখন কী হবে? মানুষ বিপদে পড়ছেন। ওদের খননের জন্যই আজ এই অবস্থা। মানুষের নিরাপত্তা কে দেবে? এসব প্রশ্ন উঠবেই। ইসিএলকে দায়িত্ব নিতে হবেই।’
গতকাল জামুড়িয়ায় ইসিএল-এর শ্রীপুর ময়দানের মঞ্চ থেকে ১২০ কোটি টাকার ৪৯ টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১০৭ কোটি টাকার ৯৩ টি প্রকল্পের শিলান্যাসও করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই সভায় তিনি বলেন, ‘ডিভিসি তার সম্প্রসারণের জন্য চার হাজার একর জমি নিয়েছে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে। আসানসোলের পাশেই আছে বীরভূমের পাচামি খনি। বিশ্বের এই দ্বিতীয় কয়লাখনি আমাদের রাজ্যে চালু হলে এক লক্ষের বেশি বেকার যুবক কাজ পাবে।’