ক্ষমতা হারানোর পর সিপিএম কর্মীদের অবস্থা ঢিলেঢালা। নেতাদের অবস্থা তারচেয়েও খারাপ। বক্তৃতা পেশ করার আগে নূন্যতম পড়াশোনাটাও আর করছেন না তাঁরা। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের এক সভায় এমনই কাঁচা কাজ করে ফেলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। দলের শ্রমিক-কৃষকদের চাঙ্গা করতে গিয়ে সূর্যকান্ত বলেন, ‘কাজ না হলে প্রশাসনিক দপ্তর ঘেরাও করুন। যাতে আপনারা নয়, প্রশাসন আপনাদের কাছে যায়’।
সূর্যকান্ত মিশ্র ভুলে গিয়েছেন, শপথ গ্রহণের পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘প্রশাসন শুধু রাইটার্সে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। তাকে জেলায় জেলায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে’। সেই অনুযায়ী প্রতি জেলায় চালু হয়েছে প্রশাসনিক বৈঠক। সবকটি বৈঠকেই উপস্থিত থাকেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রায় ৮০০ প্রশাসনিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সব বৈঠকে বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি নিজে। কোনও কাজে অসুবিধা হলে পরামর্শ দেন। ভুল-ত্রুটি থাকলে শুধরে দেন। আবার মানুষের সঙ্গে কথা বলে, তাদের সুবিধা-অসুবিধা অনুযায়ী প্রশাসনিক বৈঠকে বলে দেন কোন কাজটা অগ্রাধিকার পাবে, কোনটা নয়।
অভিযোগ, ক্ষমতা হারানোর পর স্মৃতিশক্তিও লোপ পাচ্ছে সূর্যকান্ত মিশ্রের। তিনি ভুলে গিয়েছেন, বাম আমলে প্রশাসন যেভাবে চলত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে প্রশাসন সেভাবে চলে না। আর দীর্ঘ বাম শাসনে সূর্যকান্ত নিজে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। পঞ্চায়েত দপ্তরও সামলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই সূর্যকান্তের এই বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠছে, মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি কতবার সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে ‘জনতার দরবার’ বসিয়েছিলেন? যেমন মমতা বসাচ্ছেন। রাজনৈতিক মহল জানাচ্ছে, একবারও নয়। এমন জনহিতকর উদ্যোগ, না সূর্যকান্ত, না তাঁর বাম সরকার – কেউই নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সূর্যকান্তের মতো নেতারা, ‘মুখেনং মারিতং জগত’-এ বিশ্বাসী। তাই এসব বলছেন।
রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের সভা থেকে বিজেপির রথযাত্রায় মোদী এবং অমিত শাহের রথের পাশাপাশি মমতাকেও ‘সুভদ্রার রথ’ বলে কটাক্ষ করেন সূর্যকান্ত। এখানেও তাঁর স্মৃতিলোপের চিহ্ন স্পষ্ট। বিজেপি বিরোধীতার সবচেয়ে বড় মুখ যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এ কথা অতিবড় মমতা-সমালোচকও স্বীকার করতে বাধ্য। তাছাড়া সূর্যকান্ত কীভাবে ভুলে গেলেন ২ মাস আগে রাজ্যে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করতে গিয়ে কীভাবে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল বামেরা। তমলুক ২ নম্বর পঞ্চায়েত, রামনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত, উত্তর দিনাজপুরের কানকি পঞ্চায়েত, জয়নগর ১ নম্বর পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করতে গিয়ে কীভাবে মিলে গিয়েছিল লাল আর গেরুয়া পতাকা। বোর্ড গঠনের পর একসঙ্গে বিজয়মিছিল বের করেছিল তারা। একইসঙ্গে উড়েছিল লাল আর গেরুয়া আবির।
এখন প্রশ্ন, নিজের দলের এসব ক্রিয়াকলাপ কী করে ভুলে গেলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র? না কি জোরালো আক্রমণ শানাতে গিয়ে কাছা-কোছার হুঁশ থাকছে না তাঁর? রাজনৈতিক মহলের পরামর্শ, মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করার আগে নূন্যতম হোমওয়ার্কটুকু অন্তত করুন রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র।