আজ দেশের ৫ রাজ্যে ভোট। ঠিক তার আগেই ছত্তিশগড়ের বিজাপুরে মাওবাদী হামলায় শহীদ হয়েছেন প্রায় ২৫ জন জওয়ান। তবে এই হামলার পর থেকেই এমন বেশ কিছু সম্ভাবনার খবর ভেসে আসছে, তাতে মনে হতে বাধ্য যে সর্ষের মধ্যে লুকিয়ে আছে ভূত! র এই সম্ভাবনার খবর ভেসে বেড়াচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অলিন্দে। হামলার ৪৮ ঘণ্টা পরে আজ ছত্তিশগড়ে পৌঁছান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠক করেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে। কিন্তু গত দু’দিন ধরে রাজনৈতিক প্রচারে ব্যস্ত থাকা অমিত শাহ কেন এই ঘটনার নৈতিক দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন না, আজ সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
গত কয়েক দিন ধরেই গোয়েন্দা তথ্য আসছিল জাগারগুন্ডা-জোঙ্গাগুড়া তারেমে ঘাঁটি গেড়েছে প্রায় ১৫০-২০০ মাওবাদী। যাদের নেতৃত্বে রয়েছে বছর আটত্রিশের হিডমা। মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির তরুণতম সদস্য ও পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি-র ১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার। জঙ্গলের ভিতর থেকে আসা সেই তথ্য ছিল প্রতি বারের মতো এ বারও জঙ্গলে পাতা ঝরার মরসুম শুরু হওয়ায় নিজেদের হারানো জমি উদ্ধারে সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছে মাওবাদীরা। ধারাবাহিক ভাবে আসা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার সকালেই অভিযানে নামে সিআরপিএফ, কোবরা বাহিনী, ছত্তিশগড় পুলিশের ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড।
কিন্তু অভিযানের গোটা পর্বটি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, খুব সুকৌশলে ফাঁদ পেতেছিল মাওবাদীরা। মাওবাদীদের জমায়েতের কথা ছড়িয়ে দিয়ে আসলে জওয়ানদের জঙ্গলের গভীরে, নিজেদের এলাকায় টেনে আনাই মূলত লক্ষ্য ছিল মাওবাদীদের। যে সূত্রগুলির মাধ্যমে খবর এসেছিল তাঁরা পুলিশের সোর্স হিসাবে তথ্য জোগালেও, এ ক্ষেত্রে মাওবাদীদের পরিকল্পনামাফিকই জমায়েতের তথ্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রাথমিক ভাবে সকলের মত, মাওবাদীদের অতর্কিত হামলার সময় জওয়ানরা একেবারেই প্রস্তুত অবস্থায় ছিলেন না। রীতিমতো আটঘাট বেঁধে জঙ্গলে নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে জওয়ানদের জন্য অপেক্ষায় ছিল মাওবাদীরা। বিশেষ করে জঙ্গল যুদ্ধে অভ্যস্ত কোবরা কমান্ডো জওয়ানের মৃত্যুর সংখ্যা দেখে মনে করা হচ্ছে, বাহিনীর একটি বড় অংশ অপ্রস্তুত অবস্থায় প্রায় চারশো মাওবাদীর বন্দুকের নিশানায় চলে এসেছিল। এমনকি ঠিক কত জন মাওবাদী সেখানে জড়ো হয়েছিল, সে বিষয়েও বাহিনীর কাছে স্পষ্ট তথ্য ছিল না।
প্রাথমিক আক্রমণের অভিঘাত সামলে পাল্টা হামলা চালালে মাওবাদীদের প্রায় ১৫-২০ জনের মৃত্যু হয় বলে দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। যদিও অধিকাংশ মৃত সঙ্গীর দেহ সঙ্ঘর্ষ স্থল থেকে মাওবাদীরা নিয়ে যেতে সক্ষম হওয়ায় ঠিক কত জন মাওবাদী মারা গিয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে এখনও জানাতে পারেনি কেন্দ্র। তবে মাওবাদীদের পক্ষ থেকে আজ দাবি করা হয়েছে, নিখোঁজ জম্মুর বাসিন্দা সিআরপিএফ জওয়ান রাকেশ্বর সিংহ মনহাস তাদের হাতে বন্দী রয়েছেন। সুস্থ রয়েছেন তিনি। বিষয়টি জানার পরেই আজ জওয়ানের স্ত্রী মীনু মনহাস প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর স্বামীকে মুক্ত করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। সূত্রের মতে, ওই জওয়ানকে মুক্ত করার জন্য মাওবাদীদের সঙ্গে দর কষাকষি শুরু হয়েছে।
হামলার নিন্দা করে ক্ষয়ক্ষতির পিছনে গোয়েন্দা ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, ‘‘এক জন মাওবাদী পিছু এক জন করে জওয়ান মারা গিয়েছেন। গোয়েন্দা ব্যর্থতা না-হলে এত বড় ক্ষয়ক্ষতি হয় না। গোটাটাই আসলে অদক্ষ ভাবে চালানো একটি অভিযান।’’ গোটা ঘটনায় আতসকাচের নীচে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকাও। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা এ দিন বলেন, ‘‘অন্য যে কোনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলে এতক্ষণে ইস্তফা দিতেন। ৩ এপ্রিল সকালে এগারোটায় হামলা হল। পরের চব্বিশ ঘণ্টা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নীরব। উল্টে সে সময়ে তাঁকে তামিলনাড়ুতে এক প্রাক্তন অভিনেত্রীর হয়ে ভোট প্রচার করতে দেখা গিয়েছে। তার পর তিনি ভোট প্রচারে কেরালা ও আসামে যান। সব জনসভা শেষ হওয়ার পরে অমিত শাহের টনক নড়ে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এতটা গা-ছাড়া মনোভাব নিলে চলে?’’