আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে প্রত্যেক পরিবারের অন্তত একজন সদস্যকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে বিজেপি। এই ঘোষণাকে অনেকেই স্রেফ নির্বাচনী চমক বলছেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে নানান ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনেই প্রশ্ন জাগছে, এটা কী করে সম্ভব হবে? ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এ ঘোষণা অবাস্তব বলে তাঁদের দাবি। কেউ কেউ বলছেন, বিজেপিশাসিত অন্য রাজ্যগুলির সব পরিবারের একজন করে সদস্যের কর্মসংস্থান তো হয়নি। তবে এখানে এত দরদী কেন হচ্ছে বিজেপি? এমন একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীন গেরুয়াশিবির।
এবিষয়ে আলিপুরদুয়ারের ঘাঘরার অবনী সরকার বলেন, “রাজ্যে কোটি কোটি পরিবার আছে। সেখানে সব পরিবারের একজন সদস্যের কর্মসংস্থান হবে এটা সম্পূর্ণ অবাস্তব প্রতিশ্রুতি। আসলে বিজেপি ভাঁওতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেকোনও মূল্যে এবার বাংলার ক্ষমতাতে আসতে চাইছে।” বনচুকামারির বাসিন্দা কৃষক রবীন্দ্র বর্মনের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করছেন। রবীন্দ্রবাবু বলেন, “বিজেপি সব পরিবারের একজনের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি ধাপ্পা। অনেকটা প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা করার মিথ্যা গল্পের মতো। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রেল, ব্যাঙ্ক, বিএসএনএল, এলআইসি, এয়ার ইন্ডিয়া সহ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণের চেষ্ট করছে। চাকরি তো দূরের কথা বিজেপির আমলে মানুষ ক্রমাগত চাকরি হারাচ্ছে।” কোচবিহারের বিশিষ্ট নাট্যকর্মী কল্যাণময় দাস বলেন, “এটা একটা অবাস্তব কথা। রাজনৈতিক দলের ইস্তাহারগুলি কার্যত অবাস্তবই হয়। বিজেপির ইস্তাহারও অবাস্তবের বাইরে নয়। এটি সাধারণ মানুষ যদি বিশ্বাস করে নেয় তাহলে সেটা তাঁদের বিষয়। এই মুহূর্তে ভারতের যা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে প্রতিটি পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়।”
মাথাভাঙা শহরের বাসিন্দা বরুণ সাহা বলেন, “বিজেপি লোকসভা ভোটের আগেও নির্বাচনী ইস্তাহারে চমক দিয়েছিল। প্রতিটি নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল। কোথাও কেউ তো পেয়েছেন বলে শুনিনি।” শীতলকুচির যুবক বিশ্বজিৎ বর্মন বলেন, “শিক্ষিত বেকাররা চায় চাকরি। কিন্তু চাকরি কই? সরকারি অফিসে শূন্যপদে অবসরপ্রাপ্তদের নেওয়া হচ্ছে। আর যারা কাজ পাচ্ছেন তারা অধিকাংশই চুক্তিভিক্তিক কর্মী। শীতলকুচি বিধানসভা এলাকায় ২০ হাজারের মতো পরিবার আছে। এত অফিস-কাছারি নেই যে সকলেই চাকরি পাবে।” জল্পেশের কৃষক নারায়ণ রায় বলেন, “বিজেপি বলেছিল আচ্ছে দিন, কিন্তু আচ্ছে দিন তো দেখছি না। গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইস্তাহার ছাপানো হয়েছে।” দোমোহানির পিনাকী রায়, ময়নাগুড়ি নতুন বাজারের বাসিন্দা তপনকুমার দে বলেন, “চাকরির বাজার মন্দা। হাজার হাজার লোক এখান থেকে শ্রমিকের কাজে ভিনরাজ্যে পরিবার ছেড়ে পড়ে রয়েছে। তাদের সকলকে এখানে কাজ দিলে ভালোই হয়। কিন্তু অত কাজের জায়গা করতে হলে আগে তো শিল্প আনতে হবে।”
ঘোকসাডাঙার এনজিও কর্মী অনিমা বর্মন বলেন, “প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া ব্যাপারটা হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়। রাজনৈতিক নেতারা ভালোভাবে না ভেবেই কথা বলেন। আমার মনে হয় একটু ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত।”
দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডির নরেশ রায়ের মতে, বাড়িতে ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা শেষ করে বসে থাকলেও কাজ নেই। বিজেপির ইস্তাহারটি পড়ে মনে শান্তি এলেও তা বাস্তবে ফলপ্রসূ হবে না ধরাই যায়। গঙ্গারামপুরের পপি সরকার বলেন, “কেন্দ্র সরকারের জুট মিলগুলি ধুঁকছে, জেলায় জুট কর্পোরেশনের অফিস বন্ধ। এতদিন ওরা ক্ষমতায় থেকে তা চালু করতে পারেনি। আর এখন বলছে পরিবার পিছু একজনকে কাজ দেবে। এটা নিছক ভাঁওতা ছাড়া আর কী বলব? কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “ত্রিপুরায় ওদের শাসন। সেখানে ১০ হাজার শিক্ষক কর্মচ্যুত হয়েছেন। ফলে ওসব ওদের ভোটের প্রলোভন আর মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়।”