বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির তৃতীয় টেস্ট শুরু হওয়ার আগের দিন সিডনিতে সুনীল গাভাস্কারের প্রতিকৃতি উন্মোচন করলেন রবি শাস্ত্রী। বুধবার গাওস্করের ছবি উন্মোচন করে শাস্ত্রী বলেন, ‘‘নিঃসন্দেহে আমাদের দেখা সেরা ওপেনিং ব্যাটসম্যানের নাম হল সুনীল গাওস্কর।’’ গাওস্করের এই ছবি এখন সিডনির জাদুঘরে থাকবে। সেখানে সচিন তেন্ডুলকরের ছবিও রয়েছে। এর পরে তা চলে যাবে বাওরালের ব্র্যাডম্যান মিউজিয়ামে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিয়োয় শাস্ত্রী আরও বলেছেন, ‘‘গাওস্করের নেতৃত্বে আমার খেলার সৌভাগ্য হয়েছিল। দারুণ ক্রিকেট মস্তিষ্ক। ওর মতো রণকৌশল খুব কম ক্রিকেটারের মাথা থেকেই বেরোত। কোনও কিছুতেই ঘাবড়ে যেত না।’’
পাশাপাশি গাভাস্কারের ক্যারিবিয়ান মুলুকে মাস্তানিরও স্মৃতিচারণ করেছেন রবি। প্রসঙ্গত, টেস্ট ক্রিকেটে ৩৪টি সেঞ্চুরির মালিক গাভাস্কারের শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেই রয়েছে ১৩টি টেস্ট সেঞ্চুরি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে অভিষেক সিরিজেই ১৫৪.৮০ গড়ে ৭৭৪ রানের রেকর্ড তাঁরই দখলে। সে সময় ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট দাপিয়ে বেড়াতেন স্বর্ণযুগের সব ফাস্ট বোলার। ম্যালকম মার্শাল, মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, কলিন ক্রফ্টদের সামলে এসেছেন এই ভারতীয় কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান। যে প্রসঙ্গ টেনে শাস্ত্রী বলেছেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৩টি টেস্ট সেঞ্চুরিই বুঝিয়ে দেয়, গাওস্কর ওর সেরা সময়ে কী ভাবে ক্রিকেটটা খেলত। এই পরিসংখ্যান দিয়েই ওর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা যায়।’’ যোগ করেন, ‘‘গাওস্কর যখন ওই সব দুরন্ত টেস্ট সেঞ্চুরিগুলো করছে, তখন ওকে মুম্বইয়ের ব্র্যাডম্যান বলা হত। এই ছবি উন্মোচন করাটা আমার কাছে বিশেষ একটা সম্মান।’’ শুধু ছবি উন্মোচিত হওয়াই নয়, এদিন একটি বিশেষ বইয়ের প্রকাশও হয় শাস্ত্রীর হাত ধরে। ব্র্যাডম্যান জাদুঘরের তরফে প্রকাশিত ওই বইয়ে রয়েছে ভারতের ৭১ বছরের অস্ট্রেলিয়া সফরের কাহিনি। যা নিয়ে বোর্ডের ভিডিওয় শাস্ত্রী জানান, ‘‘ইতিহাস ঘাঁটতে বসলে রোমাঞ্চ হয়। লালা অমরনাথের অস্ট্রেলিয়ায় আসা, বিনু মাঁকড়ের আসা। ভারতের বিরুদ্ধে ব্র্যাডম্যানের খেলা। নিউ সাউথ ওয়েলসের বিরুদ্ধে ভারতের দ্বৈরথ। বিজয় হাজারের দুশো। সত্যিই রোমাঞ্চকর।’’
প্রসঙ্গত, এই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিডনিতেই নিজের সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর করেছিলেন শাস্ত্রী (২০৬)। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে জিতেছিলেন বেনসন অ্যান্ড হেজেস চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়ন্সের পুরস্কারও। তবে শাস্ত্রী মনে করেন, বিরাট কোহালির নেতৃত্বে ঘরে-বাইরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়ের যে কৃতিত্ব দেখিয়েছিল ভারত, সেই উচ্চতাকে স্পর্শ করা কঠিন। বইটির মুখবন্ধে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘৭১ বছরের স্বপ্নভঙ্গের পরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওই টেস্ট সিরিজ জেতার তৃপ্তিটাই ছিল অন্য রকমের। দেশের মাটিতে এবং অস্ট্রেলিয়ায় এসে ওদের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়ের এই কৃতিত্ব অন্য কোনও ভারত অধিনায়কের স্পর্শ করতে অনেক সময় লাগবে।’’ পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলতে বরাবরই রোমাঞ্চিত হন তিনি, বলেছেন রবি। ‘‘অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে জেতার একটা আলাদা মজা আছে। কারণ, এই জয়গুলো সহজে আসে না। এক জন পেশাদার ক্রীড়াবিদের কাছে এই সব জয়ের মূল্যই আলাদা। এখানে জিতলে আলাদা সম্মান পাওয়া যায়।’’ ব্র্যাডম্যানের দেশে খেলতে নামা নিয়ে এমনই মত ভারতের বর্তমান হেড কোচের।