২০২০ কি অভিশাপেরই বছর ? মারণ ভাইরাস কোভিডের দৌরাত্ম্যে প্রাণ হারিয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ। অতিমারী আবহে ত্রস্ত ও বিধ্বস্ত হয়েছে দেশবাসী। তাছাড়া এবছর বাংলার মানুষ সাক্ষী থেকেছে পরপর নক্ষত্রপতনের। বিদায় নিয়েছেন একের পর এক গুণী, প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বেরা। বছরশেষে একবার ফের বিষণ্ণ স্মৃতিচারণে ফেরা যাক। দেখে নিই, কাঁদের হারালাম আমরা :
গত ১৫ই নভেম্বর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সিনেমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে হল এক যুগাবসান৷ শুধু সিনেমা নয়, সাহিত্য, রাজনীতি, কবিতা সব ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর বিদগ্ধ বিচরণ৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
৩১শে অগস্ট, ৮৪ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি (২০১২-২০১৭), প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ম ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ভারতের জাতীয় কংগ্রেস, ভারতীয় রাজনীতি এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।
গত ২০ শে মার্চ ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যু হয় বিখ্যাত ফুটবলার ও প্রশিক্ষক প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের। স্নায়ুর সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন আক্রান্ত ছিলেন তিনি। পিকের মৃ্ত্যুর এক মাসের মধ্যে, ৩০শে এপ্রিল আমাদের ছেড়ে চলে যান তাঁরই বন্ধু সুবিমল (চুনী) গোস্বামীও। তিনিও প্রখ্যাত ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। ফুটবল ময়দানে পিকে-চুনীর জুটি ছিল প্রবাদপ্রতিম।
২৯শে সেপ্টেম্বর ৬১ বছর বয়সে চলে যান প্রখ্যাত টলিউড অভিনেতা ও একসময়ের জনপ্রিয় নায়ক তাপস পাল। মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। সেরেও উঠছিলেন তিনি। কিন্তু কলকাতায় আসার পথে মৃত্যু হয় তাঁর।
এছাড়াও এবছর আমাদের ছেড়ে গিয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের আরেক শক্তিশালী অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায়।
এবছর আমরা হারিয়েছি পরিচালক বাসু চট্টোপাধ্যায়কেও। ৯৩ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন ‘সারা আকাশ’, ‘পিয়া কে ঘর’ খ্যাত নির্দেশক বাসু চট্টোপাধ্যায়।
চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। জার্মানিতে নিজস্ব বাসভবনে ৬ই অক্টোবর মৃত্যু হয় অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের। বেশ কয়েকদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন কবি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল ‘যৌবনবাউল’, ‘মরমী করাত’, ‘নিষিদ্ধ কোজাগরী’ ইত্যাদি।
১৮ই সেপ্টেম্বর আমরা হারিয়েছি বাংলার অন্যতম বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তকে। ফ্যাশন জগতের আইকন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ৬৩ বছর বয়সে নিজ বাসভবনে মৃত্যু হয় তাঁর।
এ বছর আমরা হারিয়েছি বাংলা সাহিত্যের প্রোজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব সুধীর চক্রবর্তীকেও। লোকসংস্কৃতির কিংবদন্তি গবেষক সুধীর চক্রবর্তী লোকসংস্কৃতির অভিজ্ঞান ও নির্যাসকে বাঙালির অন্তঃস্থলে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
২৭ জুন, ১০১ বছর বয়সে প্রয়াত হন প্রবাদপ্রতিম নৃত্যশিল্পী অমলাশঙ্কর।
নতুন বছরে যেন এমন মুহুর্মুহু প্রয়াণের বিষাদ লেগে না থাকে, এমনই আশা রাখছে মানুষ।