শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচী’ নিয়ে বিতর্কে ইতিমধ্যেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পাশে দাঁড়িয়ে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার জন্যই অমর্ত্য সেন আক্রমণের মুখে পড়েছেন, তা চিঠির ছত্রে ছত্রে বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। ‘প্রতীচী’র সীমানায় বিশ্বভারতীর জমিও ঢুকে গিয়েছে বলে সম্প্রতি যে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, এবার তা নিয়ে মুখ খুলে খোদ অমর্ত্যর জবাব, ‘বিশ্বভারতী কোনও দিন আমাদের জমি নিয়ে কোনও বেনিয়মের কথা জানায়নি।’ এ ব্যাপারে যা করার, তা তিনি আইনের সাহায্যেই করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বলেই অমর্ত্য সেনের মতো মনীষীকে আক্রমণ করা হচ্ছে। বাংলার পক্ষ থেকে অমর্ত্য সেনের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার সরাসরি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বভারতীতে কিছু নব্য বহিরাগত আপনার পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে আশ্চর্যজনক এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন। এতে আমি বেদনাহত এবং দেশের সংখ্যাগুরুদের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে যে লড়াই আপনি শুরু করেছেন, আমি তাকে পূর্ণ সমর্থন জানাই। এই লড়াই-ই আপনাকে এই সব অসত্য শক্তির শত্রুতে পরিণত করেছে।’
বিশ্বভারতী সূত্রের দাবি, গত শতকের চল্লিশের দশকে অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেনকে ১২৫ ডেসিমেল জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল। এই জমিতেই গড়ে উঠেছে অমর্ত্যবাবুদের পারিবারিক বাড়ি ‘প্রতীচী’। ২০০৬ সালে অমর্ত্য সেনের আবেদনের ভিত্তিতে জমির লিজ তাঁর নামে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, জমির মাপ করে দেখা যায়, পাশাপাশি দু’টি লিজ দেওয়া জমির মধ্যবর্তী বিশ্বভারতীর নিজস্ব ১৩ ডেসিমেল জমিও ঢুকে রয়েছে ‘প্রতীচী’র সীমানার ভিতরে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের আরও অভিযোগ, রজতকান্ত রায় যখন উপাচার্য ছিলেন, তখন অমর্ত্যকে বিষয়টি একাধিক বার মৌখিক ভাবে জানানো হলেও তিনি উচ্চবাচ্য করেননি।
এ প্রসঙ্গে অমর্ত্য বলেন, ‘বিশ্বভারতীর যে জমিতে আমাদের বাড়ি, সেটির দীর্ঘমেয়াদি লিজ নেওয়া আছে, এবং সেই লিজের মেয়াদ ফুরোতে এখনও বহু দেরি। আমার বাবা নিজে আরও কিছু জমি কিনেছিলেন, সুরুল মৌজার সরকারি খতিয়ানে তার মালিকানার তথ্যও যথাবিধি নথিভুক্ত আছে।’ উল্লেখ্য, বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের মতাদর্শের বিরুদ্ধে অমর্ত্য সেন দীর্ঘদিন ধরেই সরব। আর এ জন্য বহু বারই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। বলা হচ্ছে, ‘প্রতীচী’র জমি ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ তোলাটা সেই আক্রমণেরই নতুন দিক। অমর্ত্যর সাফ কথা, ‘শান্তিনিকেতনের নিজস্ব ঐতিহ্যের সঙ্গে বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্যের সংস্কৃতির বড় রকমের তফাতের বিষয়ে আমি আলোচনা করতেই পারতাম। এটাও জানি যে, তিনি দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকারের বলে বলীয়ান। কিন্তু আমি যা করার, ভারতের আইনের সাহায্যেই করতে চাইব।’