রাজ্যের সব অনাবাদি জমিতেও ফসল ফলবে। আরও সুজলা সুফলা হয়ে উঠবে বাংলা। এই লক্ষ্য নিয়েই ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই মে মাস থেকে কাজ শুরু হয়েছিল রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায়। কারণ, ওই জেলাগুলিতে কৃষকদের হাতে জমি থাকলেও তার বেশিরভাগ অনাবাদি পড়ে থাকে। তাই কৃষকের দারিদ্র ঘোচে না। তবে এবার দেখা গেল, মমতার স্বপ্নের ‘মাটির সৃষ্টি’র ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই সমাজের এক প্রান্তে পড়ে থাকা মানুষজনের জীবন বদলাতে শুরু করেছে। যে ৬টি জেলায় ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পের কাজ চলছে, তার মধ্যে আছে পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর। এখনও ৬ মাস হয়নি, কিন্তু মানুষের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনটা ধরা পড়েছে নানা তথ্যে।
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ওই প্রকল্পের আওতায় আনার কথা ছিল ২০১২ একর জমি। ইতিমধ্যে প্রকল্পের সুফল পেয়েছে ২০০৪ একর। তাতে ১০০ দিনের কাজ পেয়েছেন ১২,০৪৫ জন। কর্মদিবস তৈরি হয়েছে সাড়ে ৩ লক্ষ। ৩,৪১০ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। ৪০৮ জন মৎস্যজীবীও উপকৃত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের সহায়তায় এই প্রকল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩২০ জনের। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, প্রথমে অনাবাদি জমিতে ক্ষুদ্রসেচের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই জমিতে রোপণ করা হয়েছিল আম, কলা, পেয়ারা ও অন্যান্য ফলের গাছ। দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক উন্নয়নের জন্য রোপণ করা হয়েছে শাল ও সেগুন গাছ। ক্ষুদ্রসেচের জন্য ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে পুকুর খনন করা হয়েছিল। সেই পুকুরগুলিতে এখন মাছচাষ হচ্ছে।
নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে প্রশাসন জানিয়েছে, বান্দোয়ানে ১০ জনের একটি গোষ্ঠী ৩০ হাজার কলাগাছ রোপণ করেছিল। তাঁরা ইতিমধ্যে আয় করেছেন ৩ লক্ষ টাকা। বাঘমুন্ডি, কাশীপুরের মতো প্রত্যন্ত এলাকাতেও একইভাবে ফলচাষের চেষ্টা হচ্ছে। আপাতত চেষ্টা হচ্ছে যাতে সেখানে স্ট্রবেরি ফলানো যায়। একইসঙ্গে পুরুলিয়ায় বিপুল পরিমাণে সবজিও চাষ করা হয়েছে। সেই ফসল বিক্রি করা হচ্ছে স্থানীয় বাজারে। মানুষ সস্তায় সবজি পাচ্ছেন। ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পের ফসল কেনার জন্য আউটলেট চালু হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে। জেলাশাসকের অফিসে একটি আউটলেট আছে। বাকি আউটলেটগুলি আছে ১৩টি কিসান মান্ডিতে। সেগুলি পরিচালনা করার দায়িত্বে আছে বিভিন্ন মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী। পুরুলিয়ার ‘মাটির সৃষ্টি’র সাফল্যের প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পের আওতায় এসেছে ২,০০০ একর জমি। উপকৃত হয়েছেন ৩,০০০ কৃষক। এই জেলায় জোর দেওয়া হয়েছে কাজুবাদাম চাষের ওপরে। এছাড়া ফলের মধ্যে আম, কলা, পেঁপে ও লেবুগাছ লাগানো হয়েছে। ঝাড়গ্রামে প্রথম পর্যায়ে ১৫টি এলাকার ১১৮.৬ একর জমি বেছে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে আম, লেবু, কাঁঠাল, কাস্টার্ড আপেল, সজনে, নারকেল, আনারস, পেয়ারা ইত্যাদি গাছ লাগানো হয়েছে। সেলফ হেলফ গ্রুপগুলি লাভ করেছে ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫০ টাকা।এরপরের পর্যায়ে ঝাড়গ্রামে ৩,০০০ একর জমি ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পে আনার চেষ্টা হচ্ছে। অন্যদিকে, বাঁকুড়া জেলায় এই প্রকল্পের অধীনে এসেছে ১,৪০০ একর জমি। সেখানে ডিপ টিউবয়েলের সাহায্যে ক্ষুদ্রসেচের ব্যবস্থা হয়েছে। আম, কাজু, পাতিলেবু, কমলালেবু, পালংশাক, লঙ্কা, আদা, টম্যাটো, লাউ ইত্যাদি ফল ও সবজির ২ লক্ষ চারা রোপণ করা হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ২ লক্ষের বেশি কর্মদিবস। ২১০০ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন।