পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে করে আর পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে চোখে জল আসবে না এ দেশের মানুষের। আসবে হাতের কাছে পেঁয়াজ না পেয়ে! কিন্তু হঠাৎ করে কেন আকাশের দিকে যেতে শুরু করল পেঁয়াজের দাম?
সহজ ভাবে বললে উৎপাদন আর চাহিদার মধ্যে একটা ফারাক থেকে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে যে আমাদের দেশে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় মূলত নাসিক, আহমেদনগর, পুণে, ধুলে, শোলাপুরে। মহারাষ্ট্রের এই জায়গাগুলো বাদ দিলে পড়ে থাকে কর্নাটক, গুজরাত, বিহার, মধ্যপ্রদেশ আর অন্ধ্রপ্রদেশ। দেখা গিয়েছে, যে এর মধ্যে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক আর অন্ধ্রপ্রদেশের একরের পর একর জমি চলতি বছরে ভারি বর্ষণে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। সেখানে উৎপাদনের আপাতত কোনও আশা নেই।
পাশাপাশি, ভারি বর্ষণের কারণে ঘটে যাওয়া বন্যাবিধ্বস্ত পরিস্থিতির কথা। যেটুকু বা ফলন হয়েছিল, সেটুকুও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ হয়নি বন্যার কারণে। সব মিলিয়ে পেঁয়াজের দাম এ বার যদি কিলো পিছু ১২০ টাকায় পৌঁছে যায়, তা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই- এমনটাই জানাচ্ছেন কৃষিবিদ এবং বাণিজ্যবিদরা!
স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতি দেশের আমআদমির জন্য সুবিধের হবে না। কিন্তু পেঁয়াজের দাম এ ভাবে বেড়ে গেলে তা যে রাজনীতির জগতেও বিপদ ডেকে আনতে পারে, সে কথাও বলতে ভুলছেন না বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবারের বাজার দর অনুযায়ী খোলা বাজারে পেঁয়াজের দাম কম -বেশী ৫১/৫২ টাকা। যা গতবছরের তুলনায় ১২.১৩ শতাংশ বেশি। গতবছর পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৬/৪৭ টাকা কিলোপ্রতি। অন্যদিকে, এদিন হায়দ্রাবাদ এবং চেন্নাইতে পেঁয়াজের কিলো ১৩০ টাকা।
ধরা যাক ১৯৮০ সালের কথা। সে বছর ইন্দিরা গান্ধী পেঁয়াজের মালা গলায় দিয়ে পার্লামেন্টে ঘুরে ঘুরে সরকার ফেলার ডাক দিয়েছিলেন। তাতে কাজও হয়েছিল, গদি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল জনতা পার্টি! এর পরে আসা যায় ১৯৯৮ সালের কথায়। পেঁয়াজের দাম গগনচুম্বী হতে থাকায় পর পর তিন বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বদলেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। মদনলাল খুরানা, সাহিব সিং ভার্মা, সুষমা স্বরাজ-কেউ সফল হননি পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে। পরিণামে সে বছর দিল্লির গদি বিজেপি-র হাত থেকে যায় অ্যাসেম্বলি ভোটে!
তো, এই যদি অবস্থা হয়, তা হলে বিহারের কী হবে? সেখানেও তো ভোট আসছে! যে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তার শাসনেরও অধিকার নেই- ইন্দিরা গান্ধীর এই দাবি কি আবার সত্যি হয়ে যাবে? দেখা যাক!