দুর্গাপুজোর আগে শেষ রবিবার। সাতসকালে বাইপাসের ধারে একটি পাঁচতারা হোটেলের বলরুমে আইলিগ ট্রফি প্রদান করে সরকারি ভাবে সিলমোহর বসিয়ে দেওয়া হল ২০১৯-২০ মরসুমের চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান। তারপরই ট্রফি নিয়ে শোভাযাত্রায় সমর্থকদের স্রোত নেমেছিল বাইপাস সংলগ্ন এলাকায়। বহু দিন পর যুবভারতী সংলগ্ন এলাকায় প্রাণের ছোঁয়া। বড় ম্যাচ হলে এই ছবিই তো দেখা যায়। সুরে বাঁধা খেলার ছড়া আর প্রিয় দলের জন্য আবেগের ভুভুজেলা বুকে নিয়ে শয়ে শয়ে সমর্থক। দেখে মন উৎফুল্ল হয়ে গিয়েছিল। এটাই তো বাংলা ফুটবলের পরিচিত আবেগ।
মোহনবাগান এ বারই এটিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে খেলতে নামবে আইএসএলে। প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলও নতুন ইনভেস্টরদের সঙ্গী করে দেশের সেরা লিগ খেলবে। দুই দলের সমর্থকের কাছেই এই মরসুম অনেক নতুন কিছু পাওয়ার বার্তা নিয়ে আসছে। এর মধ্যেই আই লিগের ‘হোমকামিং’ সবুজ মেরুন তাঁবুতে। উৎসাহ আর আবেগ তো থাকবেই!
ট্রফি পাওয়ার পরই মোহন জনতা শহর পরিক্রমায় বেরিয়েছিল। বাইপাস, উল্টোডাঙ্গা, মানিকতলা, শ্যামবাজার হয়ে যখন বিধান সরণিতে মিছিলের ঢেউ, তখনই দেখা গেল একটি অভাবনীয় ‘দৃশ্য’। সবুজ-মেরুন স্রোতে মিশে গিয়েছে একচিলতে লাল-হলুদ রং। একঝলক দেখে মনে হতেই পারে, লিগ কলকাতায় আসার আনন্দে হয়তো মেতে উঠেছে শহরের দুই বড় ক্লাবই। কিন্তু তাই কি! ভিড়ে মিশে থাকা এই লাল-হলুদ রং তো সম্মানের পতাকা নিয়ে এগোচ্ছে না। কাশী বোস লেনের কাছে গিয়ে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হল।
এ তো মিলনান্তক ছবি একেবারেই নয়। বরং এই উৎসবের পরিবেশ যেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা কলুষিত করছে লাল-হলুদ রংকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে। এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। এটা তো কলকাতা ফুটবলের ছবি হতে পারে না। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের মধ্যে রেষারেষি, ব্যঙ্গ বিদ্রুপ থাকবে। থাকবে মিঠে কড়া সম্পর্ক। কিন্তু পুরোটাই থাকবে শালীনতার মোড়কে। প্রিয় দলের জন্য আবেগের চিরন্তন শিরশিরানিতে অবশ্যই পড়শি ক্লাবের জন্য বিদ্বেষের বাষ্প থাকবে না। এমনটাই তো দেখে এসেছে কলকাতার ফুটবল। তবে কেন এমন রুচিহীনতা। তা-ও আবার এমন এক গৌরবের মুহূর্তে।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তা শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত তো সব শুনে হেসেই ফেললেন। তিনি এই ঘটনাকে সামাজিক অবক্ষয়ের পরিচায়ক বলেই মনে করছেন। ফোনে নিরুদ্বিগ্ন গলায় বললেন, “বর্তমান সমাজের অবক্ষয়কেই আসলে ফুটিয়ে তুলেছে এই ঘটনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অন্যকে হেয় করার যে ট্রেন্ড চলছে, এটা তারই একটা অংশ। তবে আমি এই ঘটনাকে একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছি না। যাঁরা এমন করলেন তাঁরা মোহনবাগান ক্লাবকে সঠিক ভাবে প্রতিনিধিত্ব করেন বলেও মনে করি না। মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হলে জ্যোতিষদা আগে মিষ্টি পাঠাতেন। তেমন ভাবে সৌজন্য বজায় রাখতেন অন্য মোহনবাগান কর্তারাও। আজ যেটা দেখলাম সেটা সার্বিক ভাবে মোহনবাগানের সংস্কৃতি নয়।”
দলের সমর্থকদের এহেন ‘কুরুচিপূর্ণ’ কীর্তিতে আবার ব্যথিত হয়েছে মোহনবাগানে ১১ বছর খেলা প্রাক্তন ফুটবলার কম্পটন দত্ত। ক্লাবের সমর্থকদের কার্যত বিঁধে বলে দিলেন, “মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এতে সমর্থকরা আনন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আনন্দের মধ্যেই পড়শি ক্লাবকে নিয়ে এমন কটাক্ষের কারণ কী! খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাঠের ৯০ মিনিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক না! মাঠের লড়াইয়ের বাইরে তো আমরা বন্ধু হতেই পারি।”