আবার বাম-রাম জোটে বোর্ড গঠন হল পঞ্চায়েতে। একসঙ্গে উড়ল লাল আর গেরুয়া পতাকা। এবার কুলতলির জয়নগর ২ ব্লকের নলগড়া পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে গিয়ে মিলে গেল সিপিএম আর বিজেপি। পঞ্চায়েতের ১৮টি আসনের মধ্যে বিজেপি–র দখলে ছিল ৪টি, আর সিপিএমের দখলে ছিল ৭টি। মোট ১১টি আসন নিয়ে দুই দল মিলে জোট করে হল পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন। এই রাম–বাম বোর্ডে সিপিএম থেকে প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন রিজিয়া সরদার। আর উপপ্রধানের পদটি পেয়েছেন বিজেপি–র রণজিৎ পুরকাইত।
এর আগেও বাসন্তীর উত্তর মোকামবেড়িয়ায় সিপিএমের সঙ্গে বিজেপি জোট করে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করছে। জয়নগর ১ ব্লকের সাহাজাদাপুর এবং শ্রীপুরে নির্দলের সঙ্গে জোট করে বোর্ড গড়েছে বিজেপি। খুব শীঘ্রই জয়নগরের বেলে দুর্গানগরেও সিপিএমের সঙ্গে জোট করে বিজেপি বোর্ড গঠন করবে বলে জানা গেছে।
অনেক আগেই সিপিএম এবং বিজেপি-কে একে অপরের দোসর বলে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। রাজ্যে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন নিয়ে এই দুই দলের মিলে যাওয়ার ঘটনা তৃণমূল নেত্রীর সেই অভিযোগের সত্যতাই নতুন করে প্রমাণ করে। বামেদের এই বিজেপি-র প্রীতি মেনে নিতে পারছেন না অনেক বামপন্থী নেতাও। তাঁদের কথায়, যেখানে বাংলায় বিজেপি-কে আটকানোই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ছিল সেখানে শুধু তৃণমূলকে আটকাতে এই জোট মেনে নেওয়া যায় না। পঞ্চায়েতের গদির লোভেই এখন রাম-বাম মিলে যাচ্ছে।
বোর্ড গঠনের পর সিপিএম এবং বিজেপি কর্মীরা উল্লাসে মাতেন। একইসঙ্গে ওড়ে লাল আর গেরুয়া আবির। জয় শ্রী রামের সঙ্গে মিশে গেল লাল সেলাম স্লোগান। এ বিষয়ে বিজেপি-র জেলা সভাপতি সুনীপ দাস বলেন, ‘রাজ্যে তৃণমূলকে আটকাতে বিজেপি যা করার দরকার তাই করবে। তার জন্যই বাম ও নির্দলকে নিয়ে বিজেপি এই পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করছে। মানুষ উন্নয়ন চায়, উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের এই একসঙ্গে পথ চলা। গত ২৮ আগস্ট তৃণমূল এই বোর্ড গঠনে বাধা দিতে হামলা চালিয়েছিল। ফলে ভেস্তে গিয়েছিল বোর্ড গঠন। এদিন সেই বোর্ড গঠন হয়েছে’।
গোটা ঘটনার সমালোচনা করে কুলতলি ব্লক তৃণমূল সভাপতি গোপাল মাঝি জানান, ‘সিপিএম আর বিজেপি যে একে অপরের দোসর সেটাই আবার প্রমাণ হয়ে গেল। গ্রামের মানুষই এই পঞ্চায়েত প্রত্যাখ্যান করবেন’। তবে জোট করতে গিয়ে অনেক জায়গায় বিজেপি–কে প্রধানের পদ তুলে দিতে হচ্ছে বামেদের হাতে। এদিনও কুলতলি বিধানসভার নলগড়াতে পঞ্চায়েত প্রধানের পদ পেয়েছেন বামেরা। জয়নগরের শ্রীপুর পঞ্চয়েতেও প্রধানের পদ বিজেপি-কে ছেড়ে দিতে হয়েছে নির্দলের হাতে। জয়নগরের সাহাজাদাপুরেও নির্দলদের হাতেই প্রধান পদ তুলে দিয়েছে বিজেপি। একমাত্র বাসন্তীর উত্তর মোকামবেড়িয়াতেই বিজেপি পঞ্চায়েত প্রধানের পদে রয়েছে। আর সেখানে আরএসপি-কে উপপ্রধানের পদ দিয়েছে। বিষয়টি বুঝতে অসুবিধে হয়নি সাধারণ মানু্ষেরও। তাই বিজেপি-র যেন তেন প্রকারেণ জোট করে পঞ্চায়েত দখলের রাজনীতিকে ভাল চোখে দেখছেন না তাঁরাও।